আবহাওয়া পরিবর্তন পালাক্রমে প্রতিবছর ঘূর্ণায়মান। তারপরও এখন দ্রæত পরিবর্তন আমাদের খুব সাধারণ প্রচলিত সমস্যার সামনে দাঁড় করায়। আর এসমস্যা উর্ত্তীণ হয়ে পরিবারের বড়/ছোট সবাইকে যেন সুরক্ষিত রাখতে পারবে। সেজন্য আগে থেকেই প্রস্ততি নেয়া।
শীত আবার খাওয়া পাটিদের জন্য বড্ড আনন্দের। লোভলনীয় পিঠাপুলির ডিশ। শীতকালীন স্বজি, ফুল ফলের ধামাকা। তারপর ও শীতের সময় উজ্জল ত্বক/সুস্থ শরীর এর জন্য করণীয় সর্তকতা জরুরী।
শীত, অ্যাজমা, সাইনেটিস, কাশি বুকে ব্যথা সমস্যা ও কষ্টদায়ক। যাদের সাইনেটিস, হাপানি ও সর্দি কাশি, এ্যালার্জির প্রকোপে কাত হয়ে পড়েন। তাদের জন্য গুরুতর সমস্যা। ব্রহ্মাইটিস হলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করার টিস্যুটি ফুলে উঠে। এর পিছনে কারণ হিসাবে শীতের ঠান্ডা, ফ্রিজের পানি, ভাইরাস ও ব্যাকটোরিয়া চিহ্নিত কারণ দায়ী।
শীতকালে বনভোজন, বেড়ানো তো উপভোগ্য। তাযেন পারিবারিক মিলন মেলায় পালন সম্ভব হয়। সেজন্য শীত এলো এলো মুহর্তে নিজেকে সময় দিন। নিজের জন্য অন্তত: ১ঘন্টা বাচ্চাদের জন্য ২ঘন্টা। আনন্দের রাণী শীত আনন্দের বাহারি সবজি, পুলি/পিঠের সাথে টিপিক্যাল শীত বেদনাও আছে।
এক: ডিপ ব্রিদিং: নিয়মিত মেডিটেশন/প্রানায়াম/ধ্যান করুন। অ্যাব ডমিনাল বিদিং এক্সারসাইজ। শিরদাড়া সোজা করে দাড়ান। বসুন। নাক দিয়ে জোরে জোরে ২০ বার শ্বাস নিন। মুখ দিয়ে ছাড়–ন। পুনরায় আস্তে আস্তে ১০ বার শ্বাস নাক দিয়ে নিয়ে মুখ দিয়ে ছাড়–ন। চোখ বন্ধ রাখুন। এসময় সৃষ্টি কর্তার কাছে নিজের সুস্থ জীবনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
দুই : ফাকা জায়গা। নিরিবিলি জায়গা। হাটুন জগিং করতে পারলে ভাল। সিড়ি দিয়ে নামুন। । তবে মনোযোগের সাথে পা ফেলবেন। নিজেকে সচেতন ভাবে উষ্ণ করুন। হৃদয় উষ্ণ করুন। মাথা ঠান্ডা রাখুন।
তিন : অ্যাসিডিটির সমস্যা খুব বাড়ে, সকালে ঘুম থেকে সহ্য করার মত গরম ইদু উষ্ণ পানি ২ গ্লাস পানি পেটে পান করুন। অ্যাসিডিটি কমবে, জয়েন্ট পেইন, লো/হাই ব্লাড প্রেসার কমবে। ৪০ রকমের অসুখের থেকে নিরপদ থাকবে। নিয়মিত সারাবছর পান করলে। প্রচুর অন্তত: বড়রা ১৬ গ্লাস। ছোট ৮ গ্রাস পানি খান। ঠান্ডা পানি বাদ দিন।
চার : বাধা কপি, বিনস, মটরশুটি ঘাস, পুদিনা পাতা, তুলসী পাতা সিদ্ধ করে খান। সকালে ১ চিমটি কালো জিরা, আধা চা চামচ মধু, এক পিচ আদা ও তুলসী পাতা চিবিয়ে খান। কলা, আপেল, শশা, লবঙ্গ খান, মটর শুটি ডিম খান।
পাঁচ : নিউমেনিয়া থাকলে, ইনহেলার থেরাপি। ডাক্তার দেখিয়ে অষুধ। হোমিও/এ্যালাপ্যাথি যা আপনার শরীরের সাথে মিশে যায়। ধুমপান বাদ। প্রচুর পানি জাতীয় খাবার খান। শীতকালে শরীর কড়া হয়। ঈদুষ্ণ গরম পানিতে গোসল করুন। নিউমেনিয়া ও ইনফ্লুয়েন্জার প্রবণতা থাকলে আগেই ডাক্তার দেখিয়ে ভ্যাক্সিনেশন করা উত্তম। ভাইরাল ফিভার সাধারণ বিষয়। দেখে শুনে সতর্কতা অবলম্বন করে চলুন। লেবু পানি একটু চিনি দিয়ে খান।
ছয় : চামড়া ফাটে। ত্বক রুক্ষ হয়। ফলমুল/সবজি ভালো করে ধুয়ে খাবেন। সয়ামিল্ক, মুলো, রাঙাআলু, বিট শরীরের তাপমাত্রা সঠিক তাপে রাখতে সাহায্য করে। গ্রিন টি খান। ভাজাভুজি এড়িয়ে চলুন। স্টিমড/ বেকড খাবার। তুলসী/ সেলেরীপাতা (ক্যালশিয়াম, ফাইবার বিটা ক্যারেটিন, ইউজিনল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্টের প্রভাবে খুসসানি/ সর্দি কাশি বিদায়। সুপ/ চায়ে মিশিয়ে খান।
সাত : মধু/ এক চিমটে হলুদ গুড়ো/ ১ টেবিল চামচ গুড়ো ১/৪ কাপ দুধ ফুটিয়ে খান। ৩ দিন খান ঠান্ডার ধাত থাকলে ঠান্ডা দূরে থাকবে। অ্যাজমা যাদের বন্ধু তারা ইনহেলার হাতের কাছে রাখুন। আদা/রং চা খাওয়া অভ্যাস রাখুন। ৩ বেলা নখ সাইজ আদা লবন দিয়ে খান।
আট : ফাটা ঠোট, ফাটা গোড়ালি নাজেহাল। হিমেল হাওয়া চামড়া/চুল, নখ যতœ করুন। ক্লিমজিং লোশন, অলিভওয়েল সর্ষের তেল ম্যাসাজ করুন। গোলাপ পাপড়ি/গোলাপজল গরম করে গিøসারিন দিয়ে মাখুন। মধু, লেবুর রস, গাজর বাটন মেখে মুখ পরিস্কার করুন।
নয় : লেবুর রস, পাকাকলা বাটা, মধু, ডিম চুলে মেহেদী কাটা দিয়ে এক ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করুন। চুল নরম ও মজবুত থাকবে।
দশ : পাতলা কাপড় দিয়ে ঠোট মুছুন। মরা কোষ ঝরবে। নরম পাতলা সুতি কাপড় হলে মরা কোষ ধরবে। দুধের সর ঠোটের লাগান। শোয়ার আগে অলিভ ওয়েল দিন। লিপ বাম লাগানো জরুরী। গিøসারিনও ব্যবহার করা যায়।
এগার: রাতে শোয়ার ইষদুষ্ণ পানিতে মোটা দানার লবন। অল্প শ্যাম্পু মিশিয়ে পানি ২০ মিনিট সপ্তাহে ১ দিন পা ভিজিয়ে রাখুন। পিউমিগ স্টোন গোড়ালি/ পায়ের তলা ঘষুণ। পা ধুয়ে ভাল ক্রিম বা পেট্রোলিয়াম জেলী ভাল করে গোড়ালিতে লাগানো। ফাটার প্রবনতা থাকলে পা না জ্বললে সুতির মোজা পরুন ঘরে বাইরে। শোয়ার সময় অবশ্যই আলাদা পরিস্কার মোজা। বেসনে দুধ/দই মিশ্রন। গোলাপ জল /গিøসারিন মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
ব্রঙ্কিওলাইটিস হলে বাচ্চার সম্মুখে থাকা বাবা/মায়ের হাইজিন মেনে চলুন। বাচ্চাদের ধরার আগে হাত পা ধুয়ে নিন। সর্দি-কাশি ও জ্বর হলে বাচ্চাকে সাবধানে রাখুন। খেতে না পারা/ ঘ্যান ঘ্যান বাচ্চাদের সমস্যা হয়।
বয়স তো বাড়বেই। প্রাকৃতিক নিয়ম। সংসারে দায়-দায়িত্ব পূর্ণ করে। আস্তে আস্তে বাইরের কাজ সংসারের চাপ কমবে এটাই নিয়ম। তাই আগেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার। ছন্দে ছন্দে ব্যস্ততায় কাটানো জীবনে ঢিলে ঢালা ভাব আসে। তারপর শরীর মন মস্তিষ্ক আপনার। দ্রæতলয় ধীরলয় জীবনের অঙ্গ। শীতে জমাটে আনন্দে চলুন। নিজের নিয়মে সুস্থভাবে সবারই বাচ্চার অধিকার আছে। শারীরিক সুস্থতায় নজর দিতে হবে। ক্রীম ঘষা, আদা মেশানো চা খাওয়া সময় সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিক ভাবে চলবে। প্রতিদিন জীবন খুশিতে ভরপুর হতে ছন্দময়/ময়ী।
নিজের জন্য বাঁচুন বয়স্ক তো কি হয়েছে। এতদিন পারিবারের পাঁচ জনের জন্য বেঁচেছেন। এখন ও তাই সবাইকে ভালবেসে। সবাইকে নিয়েই প্রাণবন্ত হয়ে নিজে বাঁচুন। ছেলে-মেয়ের/ নাতি-নাতনিদের সাথে নিয়ে কফি হাউসে/পার্কে যাওয়ার প্রাণবন্ত তা বজায় রাখুন।
ভোরের শিউলি ঝরা ভোর। শিশির ভেজা নরম সূর্যের প্রসন্ন আলোর মতই জীবন হয়ে উঠুক। অসহ্য যন্ত্রণা বিষক্ত তীরের ফলা এফোড়-ওফোড় করে তাড়িয়ে দিয়ে। সকলের সুস্থ ও আনন্দ ভরা জীবন স্বনির্ভরতায় মহিয়ান/বলিয়ান হোক। চিরকালের শীতকে শীতবোধ, শীত পোষাক থাকুক তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে আনন্দময় হয়ে উঠু ধোয়া উঠা কফির-চায়ের কাপে উষ্ণতাময় হোক। বহুদিনের ব্যবহৃত মরচে ধরা সম্পর্কগুলো অনিঃশেষ মায়ায় আচ্ছন্ন করে পথ চলার শক্তি জোগাতেই পূর্ব প্রস্তুতির যথাযথ সুফল হোক।
* প্রাবন্ধিক ও লেখক, উপ-রেজিস্ট্রারার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।