সারাবাংলা

মারধরের ভিডিও ধারণ করাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আসমার

পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় নিরীহ এক টমটমচালককে প্রকাশ্যে মারধরের ভিডিও ধারণ করাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আসমা আক্তারের (৩০) জীবনে। প্রতিবাদ জানানো এই নারী এখন নিজেই কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। পুরো ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকায় তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য।
ঘটনাটি ঘটে ৩০ মার্চ দুপুরে দুমকী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন হাজি বাড়ির সামনে। স্থানীয় টমটমচালক হান্নান কাঠবোঝাই করে যাওয়ার পথে স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ইমরান তার পথরোধ করে বাকবিতণ্ডা ও মারধর শুরু করেন।
প্রতিবেশী আসমা আক্তার এই বর্বরতার প্রতিবাদ জানান এবং নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত ইমরান হান্নানকে ছেড়ে কাঠের টুকরো দিয়ে আসমার ওপর হামলা চালান। আসমার চিৎকারে তার মা আছিয়া বেগম, নানী রাজিয়া বেগম ও ফুফু মোমেলা বেগম ছুটে এলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
এই ঘটনায় ইমরানের বাবা জলিল ও মা কাজলও যোগ দিলে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। ইমরানের বাবার হাতে থাকা শাবলের আঘাতে গুরুতর আহত হন রাজিয়া বেগম ও মোমেলা বেগম। আহত হন ইমরান নিজেও। পুরো ঘটনাটি ঘটেছে আসমার বাড়ির সামনের সড়কে।
ওই দিন সন্ধ্যায় উভয় পক্ষই দুমকী থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ শুধু ইমরানের পক্ষের মামলা গ্রহণ করে। আহত রাজিয়া বেগম থানায় গেলে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পর দিন পুলিশ আসমা আক্তারকে আটক করে কারাগারে পাঠায়।
ঘটনা প্রকাশ্যে এলে চাপে পড়ে পুলিশ ২ এপ্রিল রাজিয়া বেগমের অভিযোগ গ্রহণ করে। তবে এ সময় পর্যন্ত প্রতিবাদী নারী আসমা আক্তার ছিলেন কারাগারে। এমন পরিস্থিতিতে এলাকায় পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণ ও প্রভাবশালীদের দাপটে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
আসমার পরিবারের দাবি, আসমা কোনো অপরাধ করেননি। শুধু মাত্র একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে এখন তিনি হয়েছেন অপরাধী। আসমা বলেন, ছবি তোলাই কি কাল হলো? আমি ভিডিও করতে গিয়ে নিজের ও পরিবারের ওপর হামলার শিকার হয়েছি। মাথায় আঘাত পাওয়া লোকেরা হাসপাতালে গিয়ে আমাদের নামে উল্টো মামলা করেছে। তারা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে নানা হুমকি দিচ্ছে।
অন্যদিকে অভিযুক্ত ইমরান দাবি করেন, তাদের সঙ্গে আসমাদের জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধ ছিল। রাস্তা নিয়ে মতবিরোধের জেরে ঘটনাটি ঘটে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, আসমা ও তার পরিবারের সদস্যরা ইমরানের বাবার ওপর হামলা চালান এবং তিনিও মাথায় আঘাত পান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক স্থানীয় মসজিদের মুসল্লি জানান, জোহরের নামাজ শেষে দেখি ইমরান টমটমচালক হান্নান ভাইকে মারধর করছে। বাধা দিলে দৌড়ে ঘরের ভিতর চলে যায়। পরে দেখি সে শাবল হাতে নিয়ে তৌফিক ভাইকে মারতে আসে। আমি শাবলটি কাড়াকাড়ি করে নিয়ে যাই। শাবলটি এখনো আমার কাছে আছে।
দুমকী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাকির হোসেন বলেন, ইমরান ও তার বাবার আঘাত গুরুতর মনে হওয়ায় অভিযোগ গ্রহণ করেছি। অন্যপক্ষ কেউ মামলা দিতে এখনো আসেনি। যদি আসে মামলা নেয়ার মত মনে হলে মামলা নেব।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, একজন নারী যদি অন্যায়ের ভিডিও করে কারাগারে যান, তবে এটি সমাজের জন্য ভয়ংকর দৃষ্টান্ত। তারা দাবি করছেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমানে রাজিয়া বেগম ও মোমেলা বেগম চিকিৎসাধীন। পরিবারটি বলছে, অভিযুক্তরা এখনো হুমকি দিচ্ছে এবং তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আরও দেখুন

এ বিষয়ের আরও সংবাদ

Close