সারাবাংলা
বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি: মূল পরিকল্পনাকারী গ্রেপ্তার, সাতদিনের রিমান্ডে

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার রাতে নেত্রকোনা জেলার পুর্বধলা থানার সাধুপাড়া গ্রাম থেকে বাস ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার ভাই রাজিব হোসেনকে আশুলিয়া থানার ধানসোনা এলাকার পশ্চিম পলাশবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। আলমগীর হোসেনকে সাতদিনের ও রাজিব হোসেনকে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানা হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) আহছানুজ্জামান। ‘
পুলিশ সুপার জানান, বাস ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী আলমগীর ও শহিদুল ওরফে মুহিত। তারা মাদকাসক্ত। তাদের দুজনের পরিকল্পনায় এই ডাকাতি সংঘটিত হয়। আলমগীর ডাকাতি করে নেত্রকোনায় পালিয়েছিল। ডাকাতির কিছু মামলামাল তার আপন ভাই রাজিবের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। তাদের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার বড় লাউতারা গ্রামে।
এর আগে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকায় লাউতারা গ্রামের মো. বদর উদ্দিন শেখের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মুহিত (২৯), শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ (৩০) এবং ঢাকা জেলার সাভার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডর টান গেন্ডা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মো. শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে সবুজ ও শরীফুজ্জামান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। মুহিতকে পাঁচদিনের রিমান্ড দেন আদালত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জিজ্ঞাসবাদে বাস ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে একই গ্রামের আলমগীরের কথা জানায়। তার দেওয়া তথ্যর ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নেত্রকোনা থেকে আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাস ডাকাতির লুন্ঠিত মালামাল তার ছোট ভাই রাজিবের কাছে আছে বলে পুলিশকে জানায় আলমগীর। পুলিশ তাকে সঙ্গে নিয়ে আশুলিয়ায় অভিযান চালিয়ে তার ভাই রাজিবকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তার কাছ থেকে লুট করা ১০টি মোবাইল সেট, নারী বাসযাত্রীদের পাঁচ জোড়া চুড়ি, তিনটি ব্যাগ, তিনটি এনআইডি কার্ড, একটি এটিএম কার্ড, বাসযাত্রীদের টিকেট, ব্যবহৃত দুইটি ছুড়ি উদ্ধার করা হয়।
এক নারী যাত্রী ডাকাতির সময় অপর নারী যাত্রীকে ধর্ষণ হতে দেখেছেন’ বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাতকার দিয়েছিলেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছি। আমরা বাসযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। নারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বাদীও ধর্ষণের কোনো অভিযোগ করেননি। সবাই শ্লীলতাহানির কথাই বলেছেন এবং খুব বাজেভাবে নারীযাত্রীদের শরীরে স্পর্শ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এখন পর্যন্ত আমরা ধর্ষণের কোনো আলামত বা তথ্য পাইনি। তবে আরও তদন্ত চলছে। ডাকাতির সঙ্গে জড়িত অপরদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সবাইকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হবে।’
এর আগে এ ডাকাতির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো– মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল ওরফে মহিত, শরীয়তপুরের জাজিরা থানার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. সবুজ এবং সাভার পৌরসভার টান গেণ্ডা গ্রামের শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ। তারা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য।
জানা গেছে, ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত দেড়টা থেকে চারটা পর্যন্ত রাজশাহীগামী ইউনিক রয়েল বাসে ৩-৪ ঘণ্টা সময় ধরে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। বাসটি রাত ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা করে। ছাড়ার সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। রাত ১টার দিকে বাসটি গাজীপুরের কালিয়াাকৈর থানার চন্দ্রা বাইপাসে এসে চা পানের বিরতির দেয়। এ সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও ৩ থেকে ৪ জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়রা উড়াল সেতু পার হওয়ার সময় ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮-৯ জন ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে। এর মধ্যে তিনজন বাসটির চালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে চালকের আসনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এক পর্যায়ে তারা ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে ভয় দেখিয়ে গাড়িতে থাকা সব যাত্রীর কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নিতে থাকে। এ সময় ২ থেকে ৩ জন ডাকাত গাড়িতে থাকা অজ্ঞাত নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানি করে। পরে ডাকাতরা বাসটি দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে নন্দন পার্ক এলাকায় নেমে যায়। পরে বাসের চালক বাস চালিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা করে। বাসটি চন্দ্রা আসার পর যাত্রীরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পুলিশকে ডাকাতির ঘটনা বললে তাদের মির্জাপুর থানায় যেতে বলা হয়। মির্জাপুর থানায় এসে যাত্রীরা ডিউটি অফিসারকে ঘটনা খুলে বলেন। ডিউটি অফিসার এএসআই আতিকুজ্জামান ওসি না আসা পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে বলেন। কয়েক মিনিট পর তারা চলে যান। পরে বাসটি ভোরে নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌঁছে। সেখানে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বাসের চালক, সুপারভাইজর ও হেলপারকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ ওই তিনজনকে ৫৪ ধারায় চালান দিলে ওই দিনই তারা জামিনে মুক্তি পায়।
এ বিষয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি বাসযাত্রী ওমর আলী মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৮-৯ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাঙ্গাইলের গোয়েন্দা পুলিশ সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল সেট, ১টি ছুরি এবং নগদ ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ পর্যন্ত পাঁচ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।