জাতীয়
নতুন রাজনৈতিক শক্তির জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন, পদত্যাগের পর নাহিদ

গণ–অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে জন আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব নেওয়াটা যৌক্তিক মনে করেছিলেন তিন ছাত্র সমন্বয়ক। এখন আবার নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থানের প্রয়োজনে নিজেকে ছাত্র–জনতার কাতারে রাখার প্রয়োজন মনে করছেন নাহিদ ইসলাম। এ কারণেই উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এরপর সাংবাদিকদের সামনে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের হাতে গঠিত নতুন যে রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে, সেই দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে সমাবেশ করে দলটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে।
ব্রিফিংয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মূলত গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের (পক্ষের) প্রতিনিধি হিসেবে প্রথমে দুজন ও পরে আরও একজন—এই তিনজন অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব নিই অন্যান্য উপদেষ্টাবৃন্দের সঙ্গে। তখন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করাটা আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছিল।’
নাহিদ বলেন, ‘গত সাড়ে ছয় মাসের প্রেক্ষিতে বলা যায়, সরকার কাজ করছে। হয়তো আমরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল এখনো পাইনি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, সরকারের একটি স্ট্যাবিলিটি (স্থিতিশীলতা) এসেছে। কিন্তু সরকারের বাইরে, দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি, সে পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন, ছাত্র–জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন। আমরা যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা করি, সে আকাঙ্ক্ষার জন্য এবং গণ-অভ্যুত্থানে যে ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করেছে সে শক্তিকে সংহত করার প্রেক্ষিতে আমি মনে করেছি যে, সরকারের চেয়ে সরকারের বাইরে রাজপথে আমার ভূমিকা বেশি হবে। আমাদের যারা সহযোদ্ধা আছেন, তাঁরাও এটিই চান। সেই প্রেক্ষিতেই মূলত আজ আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’
নিজের কাজের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত ছয় মাসে আমি আমার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছি কাজ করে যাওয়ার। দুটি মন্ত্রণালয়ের বাইরে আরও অতিরিক্ত দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি এবং মন্ত্রণালয়গুলোতেও কাজ করেছি। সেই কাজের ফলাফল হয়তো সামনে জনগণ পাবে। ছয় মাস খুব কম সময়, তারপরও আমি চেষ্টা করেছি। আমার কাজ এবং কাজের ফলাফল জনগণ মূল্যায়ন করবে। আজ থেকে আমি সরকারের আর কোনো দায়িত্বে নেই।’
আপনার জায়গায় কে দায়িত্ব নেবেন—এমন এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমার পরে কে দায়িত্ব নেবেন এটি উপদেষ্টা পরিষদই ঠিক করবে। আমি আমার জায়গা থেকে মনে করেছি, আমাকে বাইরে প্রয়োজন। কারণ, এখনো আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হয়নি। বিচার এবং সংস্কারের জায়গায় যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছিল, ছাত্ররা এসেছিল, সেই জায়গা থেকে অন্য যে দুজন রয়ে গেছেন, তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের সরকারে এখনো দায়িত্ব রয়ে গেছে। তাঁরা এখন সরকারে থেকেই জনগণকে সার্ভ করবেন। তাঁরা রাজনীতি করার প্রয়োজন বোধ করলে হয়তো সরকার ছেড়ে দেবেন।’
নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এ সমন্বয়ক বলেন, ‘নতুন যে রাজনৈতিক শক্তি এবং দল গঠন হচ্ছে, সেখানে অংশগ্রহণের অভিপ্রায় আমার আছে। জনগণের সঙ্গে মিশে, আবারও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের যে প্রতিশ্রুতি, তা মাঠে থেকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেই আমি সরকার থেকে পদত্যাগ করেছি।’
অন্তর্বর্তী সরকার সংশ্লিষ্ট অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমাবদ্ধতা ছিল, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছিল। আমরা এসে এই ব্যুরোক্রেসিকে যেভাবে পেয়েছি, সেখানে আন্দোলনের পর পুলিশের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল। জুলাইয়ের গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতা থাকার পরও আমরা কাজ করেছি। আমি জনপ্রশাসন কমিটির একটা দায়িত্বে দুই সপ্তাহের মতো ছিলাম, দুই সপ্তাহের মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, যারা ২০১৮ সালে ডিসি (জেলা প্রশাসক) ছিলেন এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁদের সরানোর ব্যবস্থা করা হবে। এ রকম কিছু উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আমি আশা করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামনের দিনগুলোতে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও গণ-অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণ ও দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে সফলতা দেখাতে পারবে।’