সারাবাংলা
বরিশালের বিপিএল উৎসবে হট্টগোলে ১০ সাংবাদিক আহত, থানায় জিডি

বরিশালে বিপিএলের শিরোপা উদ্যাপন অনুষ্ঠানে ভাঙচুর-হুড়োহুড়ির ঘটনা ঘটেছে। বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে ১০ জনের বেশি সাংবাদিকসহ অনেক দর্শক আহত হয়েছেন।
এছাড়া সাংবাদিকদের সরঞ্জাম ভাঙচুর ও খোয়া যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) নগরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বেলস পার্কে বিপিএল চ্যাম্পিয়ান দল ফরচুন বরিশালের ট্রফি প্রদর্শনীর শেষভাগে এসব ঘটনা ঘটে। রাতেই এক সাংবাদিক কোতোয়ালি মডেল থানায় এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি নিকুঞ্জ বালা পলাশের করা ওই জিডি সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকেল ৪টার দিকে ট্রফি প্রদর্শনীর সময় ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আর ওইসময় টেলিভিশনের একটি মাইক্রোফোন, নিজের ব্যবহৃত একটি আইফোন, মানিব্যাগ, মানিব্যাগে থাকা ভোটার আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ড, সোনালী ব্যাংকের স্বাক্ষরবিহীন চেক, দুই ব্যাংকের দুটি ডেবিট কার্ড ও সাড়ে ৬ হাজার টাকা খোয়া যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নিকুঞ্জ বালা পলাশ সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলানিউজকে বলেন, চাপাচাপির মধ্য থেকে কোনোভাবে বের হয়ে যে আসতে পেরেছি সেটাই সৌভাগ্য। সময় যতো যাচ্ছে শরীরের ব্যথা ততো বাড়ছে। পেইনকিলার খেয়ে শুয়ে আছি।
আহত অপর এক সাংবাদিক চ্যানেল২৪-এর কাওছার হোসেন রানা বলেন, দর্শকদের ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যাওয়ার পর শরীরের ওপর দিয়ে অনেকে চলে গেছেন। কোনোভাবে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি, আমার সঙ্গে থাকা ক্যামেরাপারসনও খুব আহত হয়েছেন। সেইসঙ্গে ট্রাইপড ভেঙে গেছে, ক্যামেরাপারসনের মোবাইল ফোন ভেঙেছে। এতো বড় অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা উচিত ছিল।
মাই টিভির বরিশাল প্রতিনিধি পারভেজ রাসেল জানান, তার বুম ছিনতাই হয়েছে এবং ট্রাইপড ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, এক শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে আমি মারধরের শিকার হই। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এখন বাসায় আছি। নিরাপত্তা ছাড়া এমন অনুষ্ঠান এর আগে বরিশালে দেখিনি।
এখন টেলিভিশনের ফটো সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার ট্রাইপড ভেঙে গেছে। আমি ও রিপোর্টার অমিত হাসান কোনোমতে নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছি। জানি না হয়তো আরেকটু হলে মৃত্যু নিশ্চিত ছিল।
এখন টেলিভিশনের রিপোর্টার অমিত হাসান বলেন, আমি হাতেপায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে এখন বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছি। এত বড় অনুষ্ঠানে এমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুঃখজনক।
দেশ টিভির ফটো সাংবাদিক শাহীন সুমন বলেন, কোনোমতে জীবন নিয়ে ফিরেছি। আরেকটু হলেই হাত ভেঙে যেত। নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ রাখা জরুরি ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা বলেন, বেলা ১২টা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেলস্ পার্ক মাঠ ক্রিকেটপ্রেমীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তবে বেলা ৪ টার দিকে ফরচুন বরিশালের টিম বাস যখন খেলোয়াড়দের নিয়ে মাঠে প্রবেশ করে তখন তরুণরা মঞ্চের সামনের বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে স্টেজের কাছে চলে আসে। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করে মুসফিক, তামিম ইকবাল, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদসহ খেলোয়াড়রা মঞ্চে উঠল উৎসুক দর্শকরা কয়েকগুণ বেশি উচ্ছ্বসিত হয়ে যায় এবং পেছনের সারির দর্শকরা সামনে আসতে চাইলে হট্টগোল বেঁধে যায়। এ অবস্থায় কয়েক মিনিটের মাথায় খেলোয়াড়রা কাপ নিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করলে দর্শকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আর ততক্ষণে ধাক্কাধাক্কিতে সাংবাদিকসহ একাধিক দর্শক পড়ে গিয়ে এবং পদদলিত হয়ে আহত হন। পাশাপাশি সাংবাদিকদের মালামালা খোয়া যাওয়াসহ ভাঙচুরের শিকার হয়।
এদিকে বিক্ষুব্ধ দর্শকরা খেলোয়াড় বিহীন মঞ্চে উপস্থিত আয়োজকদের উদ্দেশে পানির বোতল ছুড়ে মারতে শুরু করেন। আবার অনেকে পানির বোতলে বালি ভরেও ছুড়ে মারেন। এ সময় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আয়োজক টিমের সদস্যরা মঞ্চ ত্যাগ করলে সামনে থাকা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে চলে যায় একদল যুবক। এমন অরাজক পরিস্থিতির সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলেই ছিলেন, তবে তাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
তবে বিশৃঙ্খলার মধ্যেও বিপিএল ট্রফি ও খেলোয়াড়দের দেখতে পেরে খুশি ক্রিকেটপ্রেমীরা। আগামীতে বিপিএল খেলা যেন বরিশালের স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় সে দাবি তোলেন তারা।
এদিকে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, প্রত্যাশার চেয়ে দর্শক বেশি হয়েছে এবং দর্শকদের উৎসাহে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে, তারপরও কিছু ঘটনা ঘটতে পারে।