শৃঙ্খলা জীবনের অনিন্দ্য সুন্দর দিক। নিয়ম-কানুন অনুসারে কাজ করা, সময়ের কাজ সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনে শৃঙ্খলা আনয়ন সম্ভব। শৃঙ্খলার গুরুত্ব সর্বত্র। যা ব্যক্তি জীবনে সফল হতে সোপান হিসেবে কাজ করে। বিদ্যালয় জীবন থেকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রাত্যহিক কার্যাদি গুরুত্বের ভিক্তিতে সমাপ্ত করার মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব। সাফল্য বজায় রাখতে এবং পুনবার অগ্রসর হতে শৃঙ্খলার বিকল্প নেই। সুষ্ঠু ও নিশ্চিন্ত জীবন যাপনে একজন সামরিক সদস্যের চেয়ে বেসামরিক সদস্যের শৃঙ্খলা মেনে চলা কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বলা হয় হয়ে থাকে- শৃঙ্খলা জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন; যা জীবনে সফল হওয়ার অন্যতম প্রধান মন্ত্র।
শৃঙ্খলা শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ডিসিপ্লিন; যা লাটিন শব্দ ডিসিপ্লিনা থেকে এসেছে। যার অর্থ নির্দেশ, জ্ঞান। সংক্ষেপে, আমরা বলতে পারি যে শৃঙ্খলা মানে নির্দিষ্ট কিছু বিধি অনুসরণ করা। একজন শিক্ষার্থীর জীবনে শৃঙ্খলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যা আমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোন শিক্ষার্থী শৃঙ্খলা অনুসরণ না করলে সাফল্য পেতে পারে না, দিনের সময় পুরো ব্যবহার করতে পারে না। খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের কোন ম্যাচ জিততে শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়া দরকার, সৈনিকরা শৃঙ্খলা ব্যতীত কোনও যুদ্ধে সঠিকভাবে লড়াই করতে পারে না এবং একটি শিক্ষার্থীর সাফল্যে শৃঙ্খলা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। যেকোন দলের কাজ এবং খেলায় কঠোরভাবে শৃঙ্খলা মেনে চলা হয়। একটি দল শৃঙ্খলা ছাড়া ভাল মান অর্জন করতে পারে না। ক্রীড়া ক্ষেত্রে কখনও কখনও নামী এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অভাবে একটি পুরো দল শৃঙ্খলা শূণ্য হয়ে খেলায় হারতে থাকে। একইভাবে, একজন ভাল শিক্ষার্থী যদি নিয়মানুবর্তিতা অনুসরণ না করে তবে নির্ধারিত সময়ে তার পাঠ্যক্রমটি সম্পন্ন করতে পারে না এবং কাঙ্খিত ফল লাভে ব্যর্থ হয়। তাই জীবনে সাফল্য পাওয়ার জন্য সবারই শৃঙ্খলার মূল্য বোঝা উচিত।
আমরা এমন সফল শিক্ষার্থী কল্পনাও করতে পারি না যে তার জীবনে শৃঙ্খলা অনুসরণ করে না। জীবনের প্রথম দিকে যখন কোন শিক্ষার্থী প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে ভর্তি হয়, তখন তাকে শৃঙ্খলা শেখানো হয়ে থাকে। সেই পর্যায় থেকেই তাকে একজন সুশৃঙ্খল মানুষ হতে শেখানো হয়। যাতে সে তার জীবনে সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। একটা কথা প্রচলিত আছে- সময় একজন শিক্ষার্থীর জন্য অর্থ স্বরূপ। একজন শিক্ষার্থীর সাফল্য নির্ভর করে সে সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করে করে কী না তার উপর। কোন শিক্ষার্থী যদি শৃঙ্খলাবদ্ধ না হয়, নিয়মিত পড়ালেখা না করে, তাহলে সময়মতো পুরো অর্জন সাধিত হয়না। সুতরাং, শৃঙ্খলা আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো- ছাত্রজীবন। এই সময়ে আমরা আমাদের জীবনের ভিত্তি তৈরি করি। ব্যক্তির ভবিষ্যত জীবন এই সময়ের উপর নির্ভর করে। তাই জীবনের এই সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো দরকার। এটি করার জন্য শৃঙ্খলা একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান যা তার জীবনে অনুসরণ করা উচিত। একটি ভাল ছাত্র সর্বদা তার পাঠ্যক্রম নির্ধারিত সময়ান্তে সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করে, সময়মত অনুসরণ করে অর্ন্তনিহিত জ্ঞানসুধা উপভোগ করে এবং সাফল্য পায়।
শুধু মানুষ নয় প্রকৃতিও শৃঙ্খলা অনুসরণ করে। সূর্য পূর্বে উদিত হয় এবং একটি উপযুক্ত সময়ে পশ্চিমে অস্ত যায়। পৃথিবী একটি সুশৃঙ্খল উপায়ে তার কক্ষপথে চলে। একইভাবে একজন শিক্ষার্থীর তার সর্বাত্মক উন্নয়নের জন্য শৃঙ্খলা অনুসরণ করা উচিত। যে শিক্ষার্থীর যথাযথ সময়সূচি নেই সে তার সহ-পাঠক্রমিক (যেমন: নাচ, গান, আবৃত্তি, কারাতে, স্কাউটিং, গার্ল গাইডিং, বিএনসিসি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ইত্যাদি) কাজের জন্য সময় বের করতে পারে না। আধুনিক সময়ে একজন ভাল শিক্ষার্থীর নিয়মিত পড়াশোনার সাথে সাথে নিজেকে বিভিন্ন সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রমে জড়িত করা আবশ্যক। তবে শৃঙ্খলা ছাড়া একজন শিক্ষার্থী এই কার্যক্রমের জন্য সময়ের অভাব অনুভব করতে পারে। প্রয়োজনীয় সময় জ্ঞানাভাবে সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রমে জড়িত থাকার কারণে কখনও কখনও তার পড়ালেখায় পিছিয়ে পরার সম্ভাবনাও থাকে। একইভাবে একজন ছাত্রকে তার পেশাগত সাফল্য পেতেও সুশৃঙ্খল থাকা আবশ্যক। আবার পরীক্ষার হলেও শৃঙ্খলা অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।
শৃঙ্খলার প্রকারভেদ: আচরণ পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে তিন ধরণের শৃঙ্খলা রয়েছে। (ক) প্রতিরোধমূলক শৃঙ্খলা, (খ) সহায়ক শৃঙ্খলা, এবং (গ) সংশোধনমূলক শৃঙ্খলা।
(ক) প্রতিরোধমূলক শৃঙ্খলা:
এই ধরণের শৃঙ্খলা দুর্ব্যবহার সংশোধনকে লক্ষ্য করে প্রয়োগ করা হয়। দুর্ব্যবহার এমন আচরণ যা নির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা কিংবা আচার-ব্যবহার অনুসারে অনুপযুক্ত। এই শৃঙ্খলা নির্দিষ্ট ধরণের আচরণ যা করা উচিত নয় তা প্রদর্শিত হতে বাধা দেওয়ার উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে। এটি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদেরকে খারাপ আচরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং তেমন ক্ষেত্রে শুদ্ধতার উন্নতি ঘটায়। বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে এটি প্রয়োগের জন্য নির্ধারিত বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয় এবং নির্দেশিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদাসীন আচরণ রোধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে।
(খ) সহায়ক শৃঙ্খলা:
এই ধরনের শৃঙ্খলা আত্ম-নিয়ন্ত্রণের মতো ব্যক্তির গুণাবলীকে সমর্থন করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। যা বিশৃঙ্খলদের সহজেই শৃঙ্খলায় ফিরে আসতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সামনে এমন কোন অনুশীলন প্রদর্শিত হয় যা দেখে সে সঠিক নিয়ম শিখতে পারে। এটি অনেকটা না বলে করিয়ে দেখানোর মত। এতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সরবরাহের মাধ্যমে তাতে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করে তা করতে উৎসাহী করে তোলা হয়।
(গ) সংশোধনমূলক শৃঙ্খলা:
এই বিষয়টি সমস্যার সাথে জড়িত এবং সরাসরি তা রোধ করতে এই প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার বিশৃঙ্খলা অস্বস্তিকর এবং ভয়ঙ্কর মাত্রায় পরিচিত এবং তাই সাধারণ মানুষ এই প্রক্রিয়ার ব্যবহার এড়াতে চেষ্টা করে। অস্বস্তি এবং ভীতিজনক প্রভাব সত্তে¡ও এটি একটি খুব কার্যকর প্রকিৃয়া। অনেক সময় লঘু দন্ড কিংবা সকলের সামনে তা তুলে ধরে রোধ করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। যা সকলের মধ্যে বিঘ্নজনক আচরণ বন্ধ করতে ব্যবহার করা হয় এবং এর কার্যকারিতা স্বরূপ ভবিষ্যতে কেউ তেমন করার সাহস দেখায় না।
শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার নীতিসমূহ:
শৃঙ্খলা কার্যকর করার জন্য এর নীতি অনুসরণ করা উচিত। শৃঙ্খলাবদ্ধ পদক্ষেপের ক্রিয়া এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত। পিতা-মাতা বা শিক্ষক হিসেবে সন্তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা আপনার উপর নির্ভর করে। তবে আপনি কীভাবে তা গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবেন তা আপনার দক্ষতার উপর নির্ভর করে। সতর্কভাবে প্রয়োগে ব্যর্থ হলে শিশু আপনার প্রতি ঘৃণাভাব পোষণ করতে পারে। যা শিশুকে আরও অনুপযুক্ত আচরণের দিকে পরিচালিত করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে চাকরির প্রথম বছরগুলিতে শিক্ষকরা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ঝোঁক রাখে; তার অন্যতম কারণ হলো শিক্ষার্থীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার সময় ভারসাম্য না পাওয়া। তবে সেক্ষেত্রে বাবা-মায়ের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার কোন সুযোগ আছে কি?
শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার আরেকটি নীতি হচ্ছে- শৃঙ্খলায় কার্যকর পদ্ধতির ব্যবহার। ফ্রয়েড সিগময়েড এবং কার্ল রজার্সের তত্ত্বানুসারে, প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের আচরণসমূহ কীভাবে আলাদা করে অনুভূত করা হয় তার বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনার মাধ্যমে কার্যকর পদ্ধতির অনুসরণ তাদের পছন্দসই হয়ে থাকে। শৃঙ্খলার প্রতি আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গি এমন একটি নীতি যা শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। স্কিনারের একটি আচরণবাদী তত্ত¡ অনুসারে- শাস্ত্রীয় ধ্রুব এবং ব্যবহারিক ধ্রুব বিদ্যমান। যা যুগপৎভাবে আচরণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করে। ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি এবং নেতিবাচক শক্তি হ্রাসের মাধ্যমে আচরণ সংশোধন করা যায় এবং এটি শৃঙ্খলাবদ্ধ কার্যক্রমকে সফল করে তোলে। জ্ঞানীয় বিকাশের তত্ত¡গুলির কারণে শৃঙ্খলার প্রতি জ্ঞানীয় পদ্ধতির বিকাশ ঘটেছিল। চিন্তার প্রক্রিয়া প্রভাবিত আচরণের কারণে জ্ঞানের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল। মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে চিন্তাভাবনা ও আচরণের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। এই পদ্ধতিটি সমস্ত বয়সের জন্য কাজ করে কারণ জ্ঞানীয় বিকাশ জীবনের সমস্ত স্তরের জন্য।
শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জসমূহ:
যখন আচরণের জন্য সুনির্দিষ্ট ধারণা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি, তখন খারাপ আচরণের ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টিকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা অনুচিত হবে কারণ তাদের ধারণা ছিল না যে এটি করা কোনও ভুল কাজ। শৃঙ্খলা কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় আচরণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে এবং তা অবহিত করতে হবে। সন্তানের আচরণ ইতিবাচক দিকে পুনরুদ্ধারে পারিবারিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রাপ্তবয়ষ্কদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যা অনেক সময় অকার্যকর শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখে! জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দারিদ্রতা বাড়ে। দারিদ্র্যের কারণে দুর্ব্যবহারের ঘটনাগুলি বৃদ্ধি পায় এবং এই অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়। প্রাপ্তবয়স্কদের শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় কর্মসংস্থান ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
প্রথম জীবনে শৃঙ্খলা:
জীবনের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শৃঙ্খলার প্রশিক্ষণ শুরু হয়। বিদ্যালয় এবং বাড়িতে শিশুদের নিয়মানুবর্তিতার নিয়মগুলি অনুসরণ করতে শেখানো হয়। প্রথম জীবনে অভিভাবক এবং শিক্ষকমন্ডলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিদ্যালয় দিয়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন। শিক্ষার্থীদের আমরা শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে শেখাই। এছাড়া আন্তরিক, নিবেদিত, আত্মবিশ্বাসী, নিয়মানুবর্তিতা, প্রবীণদের সম্মান করা এবং অন্যান্য পালনীয় নিয়মগুলি অনুসরণ করানো শেখাতে হবে। ছাত্রজীবনের শৃঙ্খলা ব্যক্তিত্ব গঠনে এবং চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ছাত্রজীবনে শিখানো অনুশাসন, অভ্যাস এবং শিষ্টাচার জীবন গঠনের সময়কালে ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
স্বাস্থ্যকর জীবন ও শৃঙ্খলা:
জীবনের সামনের দিনগুলির জন্য সুস্থ এবং সবল হওয়া উচিত। কঠোর শৃঙ্খলার জন্য প্রাথমিক জীবনে অবশ্যই অনুশীলন করা উচিত। একটি কথা প্রচলিত যে, একটি সুস্থ দেহে একটি সুস্থ মন থাকে। যিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ হন তিনি জীবনে উচ্চতা বাড়ান। ইতিহাসে মহান পুরুষদের উদাহরণ রয়েছে; তাঁরা তাঁদের জীবনে সফল হয়েছিলেন কারণ তাঁরা একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন করেছিলেন।
বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা:
বিদ্যালয় একটি শিশুর জীবনের অনুসিন্ধৎসু মননের তৃষ্ণা মেটায় এবং তা অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি করে। তাই ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণিকক্ষের অভ্যন্তরে পড়াশুনা উপযোগী পরিবেশ রক্ষায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরব থাকা এবং শেখানো বিষয়টিতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। খেলার মাঠে প্রতিটি খেলাধুলা সুনির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যা সুচারুরূপে সম্পন্নের নিমিত্তে এবং সফল খেলা নিশ্চিত করার জন্য অনুসরণ করা প্রয়োজন। এই নিয়মগুলি শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন অর্জনের লক্ষ্যে নিশ্চিতভাবে কাজ করে। বিদ্যালয়ে নিয়মানুবর্তিতা মানে সময়মতো বিদ্যালয়ে যাওয়া, বিদ্যালয়ের সমস্ত নিয়ম-কানুন অনুসরণ করা, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রদত্ত সমস্ত কাজ সমাপ্ত করা ইত্যাদি। এমনকি সহপাঠীর পাঠ্যক্রমিক কাজে সহযোগিতা করা- যেমন, শ্রেণীতে কি পড়ানো হয়েছে, শ্রেণি নির্দেশনা কী তা জানিয়ে সহযোগিতা করাও একজন শিক্ষার্থীর সুশৃঙ্খলতার পরিচায়ক।
বাড়িতে শৃঙ্খলা:
শিক্ষার্থী জীবনে বাড়িতে শৃঙ্খলা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। দিনের শুরুতেই আমাদের প্রস্তুত হতে হয় সারাদিনের কার্যক্রম সঠিকরূপে বাস্তবায়নের মননে। দিনের শেষে যখন সময়মত রাতের খাবার এবং বিছানায় গিয়ে ঘুমানো প্রয়োজন হয় তখনও শৃঙ্খলা দরকার। তবে শুধু সন্তানের শৃঙ্খলা দেখতে চাইলে তার মধ্যে তা প্রতিফলন ঘটানো অনেকটা অসম্ভব যতক্ষণ পর্যন্ত তার সামনে তার অভিভাবক ও পরিবারের বড়রা তা অনুশীলন না করে। তাই অভিভাবক তথা বড়দের ‘সহায়ক শৃঙ্খলা’ পালন করে দেখাতে হবে যাতে ছোটরা তা অনুসরণ করতে পারে।
সফল জীবনে নিয়ম-শৃঙ্খলা একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। অন্য কথায়, শৃঙ্খলা একটি সফল জীবনের মূল চাবিকাঠি। সবারই একটি সফল জীবনের স্বপ্ন রয়েছে। তার জন্য আমাদের সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজ করা উচিত।
*লেখক: অধ্যক্ষ, ফরিদপুর জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ; ঝিলটুলী, ফরিদপুর – ৭৮০০।