জাতীয়
অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে বিএনপিকেও ছুড়ে মারবে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করলে আওয়ামী লীগের মতোই আপনাদের অবস্থা হবে। দলের কোনো নেতাকর্মী অন্যায় করলে জেলার নেতারা দমন করতে না পারলে পুলিশের হাতে তুলে দেন। অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিকেও জনগণ ছুড়ে মারবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মালিগাঁও কাশিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গণসংযোগের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য শেষে চিলা রং ইউনিয়নের মলানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি আয়োজিত এক পথসভায় দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে জামালপুর ইউনিয়নের মালিগাঁও কাশিডাঙ্গা এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা শেষ করে রায়পুর এবং চিলা রং ইউনিয়নে প্রবেশ করলে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু তাকে একনজর দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অনেক নারী শিশু তার কাছে গিয়ে সেলফি তোলেন। বিএনপি মহাসচিব এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার দেশটাকে ১৫ বছরে জাহান্নাম তৈরি করেছিল। আল্লাহর রহমতে আমরা রক্ষা পেয়েছি। হাসিনা ডাইনি ছিলেন। ডাইনির হাত থেকে আমরা এখন মুক্ত। এখন পাশের দেশ ভারত থেকে বসে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। তিনি যদি সত্যিই রাজনীতি করে থাকেন, তাহলে দেশের মানুষের সামনে এসে দাঁড়ান। আমরা মামলা মোকাবিলা করেছি, জেল খেটেছি, আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে জামিন নিয়েছি। আপনিও দেশে আসুন, মামলা মোকাবিলা করুন। আপনি যদি এতই জনপ্রিয় হন, তাহলে পালিয়ে গেলেন কেন?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা অনেকে মনে করেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আবারও দেশে ফিরে আসবে। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিব একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন, যে তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত তাহলে ছিঁড়ে খেত। হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেছেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে ও অনেক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। আওয়ামী সরকার বাংলাদেশের মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখতে চেয়েছে, কিন্তু জনগণ কখনো অন্যায় মেনে নেয়নি।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুধু মামলা আর নির্যাতনের মধ্য দিয়েই আমাদের ১৫ বছর পার হয়েছে। কিন্তু তাতেও তারা আমাদের দমাতে পারেনি। সারাদেশে মানুষ এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজও সোচ্চার।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার একটি ‘আয়না ঘর’ নামের বন্দিশালা তৈরি করেছিল, যেখানে রাজনৈতিক বিরোধীদের দিনের পর দিন, এমনকি বছরের পর বছর বন্দি রাখা হতো। জাতিসংঘের এক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, এই ধরনের গুমের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৭০০। আমাদের দলের অনেক নেতা সেই নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আজমীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তিনি একজন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, যাকে আট বছর ‘আয়না ঘরে’ আটকে রাখা হয়। আজও অনেকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমাদের নেতা ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার বাসার সামনে থেকে—সেই থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
নিজের ও দলের নেতাকর্মীদের ওপর হওয়া মামলার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার বিরুদ্ধে ১১১টি মামলা হয়েছে। নানা ধরনের অবাস্তব অভিযোগ আনা হয়েছে- ময়লার গাড়ি পোড়ানো, বোমা হামলার মতো অভিযোগও আছে। আমি ১১ বার জেলে গিয়েছি, প্রায় তিন বছর কারাবন্দি ছিলাম।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বন্দিজীবনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তিনি ছয় বছর বন্দি ছিলেন। এর মধ্যে দুই বছর ছিলেন একেবারে অন্ধকার কক্ষে। বিএনপি নেত্রীকে যে কারাগারে রেখেছিল সেখানে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করছিল। এভাবে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। আল্লাহ আজ তাদের শাস্তি দিচ্ছে।
সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এক টাকা নয়, দুই টাকা নয়, হাজার টাকাও নয়- প্রায় ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চাকরি ও ব্যবসা পেতে হলেও দলীয় পরিচয় দেখা হয়েছে, বিএনপি-সমর্থকদের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য করা হয়েছে।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। আজ যারা ১৮-২০ বছর বয়সি, তারা জীবনে একবারও ভোট দিতে পারেনি। এবার একটি সুযোগ এসেছে- আমরা যেন সবাই মিলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারি।
সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দেশকে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের প্রস্তাবিত সংস্কারের লক্ষ্যও তাই- কোনো বিভেদ নয়, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়া।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্ভরশীল ও নিরাপদ দল হলো বিএনপি। বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলেই এ দেশের হিন্দুরা ভালো থাকবেন। বিএনপি প্রতি হিংসা রাজনীতি করে না। সুন্দর ভালোবাসা দিয়ে হিন্দু মুসলিমসহ সবাইকে নিয়ে শান্তির বাংলাদেশ চাই আমরা।
এর আগে জামালপুর ইউনিয়নের মালিগাঁও কাশিডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দলটির আয়োজিত এক পথসভায় তিনি বলেন, সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন খুব খারাপ লোক। তিনি এসব বিভেদ সৃষ্টি করেন।
গণসংযোগের আগে নিজ বাসভবনে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ফখরুল।
ঘুম থেকে উঠে ঠাকুরগাঁও শহরের হাজীপাড়া মহল্লার প্রয়াত স্কুলশিক্ষক বজলুর রশিদের পরিবারের দেখা করে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পুনর্নির্মাণের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষ করে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
নিজ নির্বাচনি এলাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপির জনপ্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, এই এলাকায় রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করা হয়নি। কারণ আপনারা বিএনপি সমর্থন করেন। এমন অনেক এলাকা আছে বিএনপি সমর্থনের কারণে বঞ্চিত করা হয়েছে। আপনারা বলেন এমন ব্যক্তিরা কি জনপ্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন? আসুন আমরা সবাই মিলে একটা ভালোবাসার দেশ গড়ি।
মলানী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত পথসভা শেষ করে আরও দুইটি পথসভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল।
গণসংযোগ কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সুলতানুল ফেরদৌস নম্র চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিনসহ দলের নেতাকর্মীরা সফরসঙ্গী হিসেবে বিভিন্ন পথসভায় বক্তব্য দেন।