সারাবাংলা

অপারেটরদের সেচবাণিজ্যে জিম্মি বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক

নিজের কার্ড দিয়ে পানি দিতে গেলে অপারেটরদের নাগাল পাওয়া যায় না। তাদের কার্ডে পানি নিলে ১২৫ টাকার পানির জন্য গুনতে হয় ৬৫০-৭৫০ টাকা। কোথাও অভিযোগ দিয়ে কাজ হয় না। জমিতে আউশ ধান ও পাট বীজ বপন শুরু হয়েছে। এখন পানির প্রয়োজন অনেক বেশি। বাধ্য হয়ে বেশি দামেই পানি কিনছি। এভাবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমাপাড়া ইউনিয়নের কামিনী গ্রামের রায়হান আলী।
একই অভিযোগ সদর ইউনিয়নের রাওথা গ্রামের কৃষক বাহাদুর আলীর। পানির জন্য বরেন্দ্রের কার্ড করেছেন তিনি। অপারেটর মানিক আলী নানা অজুহাতে পানি দেন না। পরে তাঁর কার্ড থেকে পানি নেওয়া শুরু করেন। গত বছর এক বিঘা জমিতে এক ঘণ্টা পানি দিতে ৪০০ টাকা গুনতে হয়েছে। এ বছর ৬০০-৬৫০ টাকা দাবি করা হচ্ছে। এত দাম দিয়ে পানি কিনে ফসল উৎপাদনে লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
জানতে চাইলে রাওথা বিলের গভীর নলকূপের অপারেটর মানিক আলী বলেন, গত বছর এক বিঘা জমিতে ৪০০ টাকা নিয়েছি। এবার পানি কম ওঠায় ৬০০ টাকা নিতে হচ্ছে। বরেন্দ্রের নিয়মের বাইরে কেন বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে– প্রশ্ন করলে বলেন, আমাদের দামে পোষালে কৃষকরা পানি নেবে, নয়তো না। এর কম করা সম্ভব না।
কামিনী বিলের অপারেটর মমিনুল ইসলামের ভাষ্য, ‘৫০০-৬০০ টাকা ঘণ্টায় পানি দিচ্ছি। সরকারি দাম কত তা আমার জানা নেই। এর কম কোথাও নেওয়া হয় না, তাই আমিও নিই না।’
কৃষক রায়হান আলী ও বাহাদুর আলীসহ চারঘাট উপজেলার ৪৩ হাজার কৃষক জিম্মি সেচ অপারেটরদের কাছে। দুই বছর আগে সেচের পানির জন্য তানোর ও গোদাগাড়ীতে তিনজনের আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। এরপরও বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। চলতি মৌসুমেও বিএমডিএ’র নিয়োগ দেওয়া গভীর নলকূপের অপারেটররা পানির দাম তিন-চার গুণ বেশি আদায় করছেন।
বিএমডিএ সূত্রে জানা যায়, চারঘাটের ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় গভীর নলকূপ রয়েছে ৬৪টি। সেচের আওতায় জমি রয়েছে ১৩ হাজার ৩০০ হেক্টর। কৃষকের সেচ সুবিধার জন্য এসব গভীর নলকূপে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ দেয় সরকার। শুরুর দিকে সেচ চার্জ আদায়ের জন্য কুপন প্রথা চালু ছিল। ২০০৫ সাল থেকে কৃষকদের ডিজিটাল কার্ড দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ খরচ বাবদ কৃষকের কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টা পানির জন্য ১২৫ টাকা করে কেটে নেওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি উল্টো।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চারঘাটের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, অপারেটর নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি টাকা আদায় করছে কিনা, তা দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা বিএমডিএ কর্মকর্তার। নলকূপ পরিদর্শনও করার কথা তাঁর। কিন্তু কৃষকরা জানিয়েছেন, চারঘাটে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী হানিফ শিকদার পুঠিয়ায় অফিস করেন। অফিসে গিয়ে কৃষকরা তাঁকে পান না। শতবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেন না। নলকূপে বিএমডিএর নিয়ন্ত্রণ নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, পানির সেচ ছাড়া ফসল উৎপাদন সম্ভব না। যেসব অপারেটর পানির বাড়তি দাম নিচ্ছেন, তাদের বিষয়ে বিএমডিএকে জানানো হবে।
বিএমডিএ সেচ শাখার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জিন্নুরাইন খান বলেন, কৃষকের পানির ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সেচ কমিটি ও গভীর নলকূপের পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে। মৌসুম শুরুর আগে প্রতিটি উপজেলার অপারেটর নিয়ে সভা করে সঠিকভাবে পানিবণ্টনের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এর পরও কেউ অনিয়ম করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী বিষয়গুলো দেখে সমাধান করবেন। চারঘাট জোনের কর্মকর্তার ফোন না ধরা ও অফিস না করার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।

আরও দেখুন

এ বিষয়ের আরও সংবাদ

Close