সারাবাংলা

বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স, ক্ষমা চাইলেন আসিফ

সমালোচনা ওঠার পর বাবার নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল করে এ ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার ক্ষমা চাওয়ার পোস্টটি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া এ তরুণ।
আসিফের বাবা বিল্লাল হোসেন কুমিল্লার মুরাদনগরের আকবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। দুই বছর পরে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা। এর আগে আসিফ যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে, সেই মন্ত্রণালয়ের কাজের জন্য বিল্লাল হোসেনের ঠিকাদারি লাইসেন্সের খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা হয়।
গত ১৬ মার্চ বিল্লাল হোসেনের নামে লাইসেন্সটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লা থেকে করা বলে জানিয়েছিলেন সাংবাদিক জুলকারনাইন শায়ের। তিনি বুধবার রাতে ফেসবুক পোস্টে খবরটি দিয়ে লিখেছিলেন, ‘এ বিষয়ে জানতে আমি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি সময় নিয়ে যাচাই করে জানান লাইসেন্স ও তালিকাভুক্তির বিষয়টি সঠিক। কিন্তু এটি তাঁর জ্ঞাতসারে হয়নি। স্থানীয় জনৈক ঠিকাদার তাঁর শিক্ষক বাবাকে ঠিকাদারি লাইসেন্সটি করতে ও তালিকাভুক্ত করতে প্ররোচিত করেন।’
এরপর গতকাল বাবার নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল করে সেই আদেশের ছবি দিয়ে গতকাল ফেসবুকে পোস্ট দেন আসিফ মাহমুদ।
এতে বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আসিফ লিখেছেন, ‘আমার বাবা স্কুলশিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় এক ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য তাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশে লাইসেন্স করতেই পারেন। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ (বৃহস্পতিবার) বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।’
বিল্লাল হোসেন দুটি ঠিকাদারি লাইসেন্স নিলেও আসিফের পোস্টে শুধু এলজিইডি উল্লেখ রয়েছে।
সূত্র জানায়, এলজিইডি ছাড়াও কুমিল্লা জেলা পরিষদ থেকে ঠিকাদারি লাইসেন্স নেন বিল্লাল হোসেন। সরকারি দুটি দপ্তরই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের নিয়ন্ত্রণে। তবে গতকাল বিল্লাল হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি লাইসেন্সই বাতিল করেছে এলজিইডি ও জেলা পরিষদ।
এ ব্যাপারে বিল্লাল হোসেন সমকালকে বলেন, ‘ছেলের সম্মতি ছাড়াই দুটি লাইসেন্স করা হয় এবং এতে আমি বিব্রত।’ তিনি বলেন, ‘দেশে আগেও অনেক মন্ত্রী-এমপির স্বজন ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে কাজ করেছেন। ছেলেকে (আসিফ মাহমুদ) না জানিয়ে লাইসেন্স করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এমন সমালোচনা হবে চিন্তাও করিনি। আমার আবেদনে দুটি লাইসেন্সই বাতিল হয়েছে। এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।’
জানা যায়, বিল্লাল হোসেনের আবেদনে গত ১০ মার্চ এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর অনুমোদনে কুমিল্লা জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৬ মার্চ ৫ হাজার ৯০০ টাকা ব্যাংক চালান দেওয়ার পর ওই দিনই নির্বাহী প্রকৌশলীর সইয়ে লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মতিন বলেন, সব বিধি মেনেই লাইসেন্স পান বিল্লাল হোসেন। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এখনও জেলায় এলজিইডি কার্যালয়ে কোনো দরপত্রে অংশ নেয়নি। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার বিল্লাল হোসেন আবেদন করলে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা পরিষদের নথিতে দেখা যায়, গত ৯ মার্চ জেলা পরিষদের মাসিক সভায় মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজকে ঠিকাদারি লাইসেন্স দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার লাইসেন্স বাতিলে বিল্লাল হোসেন আবেদন করলে তা জেলা পরিষদ অনুমোদন করে। এ লাইসেন্সে কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।

আরও দেখুন

এ বিষয়ের আরও সংবাদ

Close