জাতীয়

যুক্তরাজ্যে এআই কপিরাইট আইনের প্রতিবাদে ১ হাজার শিল্পীর অ্যালবাম প্রকাশ

যুক্তরাজ্যের বাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানিগুলোকে নিয়ে আসার জন্য কপিরাইট আইনে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। এ প্রস্তাবিত পরিবর্তনের মাধ্যমে এআই ডেভেলপাররা শিল্পীদের অনলাইনে পাওয়া কনটেন্ট তাদের মডেলে প্রশিক্ষণ দিতে পারবে। এ জন্য ডেভেলপারদের কোনো অনুমতি লাগবে না বা ফি দিতে হবে না। সে ক্ষেত্রে শিল্পীদের ‘অপ্ট-আউট’ প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ‘সাইলেন্ট’ (নীরব) অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন ১ হাজার সংগীতশিল্পী।
উল্লেখ্য, অপ্ট-আউট হলো, যদি কোনো শিল্পী এআই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে না চান, তাহলে কনটেন্ট সরিয়ে নিতে কোম্পানিকে বলতে পারবেন। তবে এ প্রক্রিয়ায় শিল্পীদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয় এবং তাঁদের অজান্তে এসব কনটেন্ট ব্যবহৃত হতে পারে। তাই কপিরাইট নীতি পরিবর্তনে যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন শিল্পীরা।
সরকারের প্রস্তাবিত আইনি পরিবর্তনগুলোর প্রতিবাদে এ অ্যালবাম গতকাল সোমবার প্রকাশিত হয়েছে। অ্যালবামটির শিরোনাম ‘ইজ দিস হোয়াট উই ওয়ান্ট’ (এটাই কি আমরা চাই)। জনপ্রিয় শিল্পী কেট বুশ, ইমোজেন হিপ, ম্যাক্স রিচটার, থমাস হুইট জোন্সসহ আরও অনেকে এ অ্যালবামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তা ছাড়া অ্যানি লেনক্স, ড্যামন আলবার্ন, বিলি ওশেন, দ্য ক্ল্যাশ, মিস্টারি জেটস, ইউসুফ/ক্যাট স্টিভেন্স, রিজ আহমেদ, টোরি আমোস ও হ্যান্স জিমার সাইলেন্ট অ্যালবাম প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রতিবাদ করেছেন।
এটি কোনো সাধারণ সংগীতের অ্যালবাম নয়। এ অ্যালবামে কোনো গান নেই, বরং খালি স্টুডিও এবং পারফরম্যান্স স্পেসের পরিবেষ্টিত শব্দ রয়েছে, যা একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। এ শব্দগুলো তাঁদের মনের অবস্থার প্রতিফলন। কপিরাইট আইনের পরিবর্তন শিল্পীদের সৃষ্টিশীল কাজকে মূল্যহীন ও শূন্য করে ফেলবে।
অ্যালবামের ১২টি ট্র্যাকের শিরোনামগুলো একসঙ্গে একটি স্পষ্ট বার্তা প্রদান করছে। সেই বার্তায় বলা হয়, ‘ব্রিটিশ সরকারের উচিত এআই কোম্পানিগুলোকে লাভবান করার জন্য সংগীত চুরিকে বৈধতা না দেওয়া।’
এটি যুক্তরাজ্যে কপিরাইট আইনের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবাদ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। একই ধরনের প্রতিবাদ অন্যান্য দেশে যেমন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে। এটি শিল্পীদের মধ্যে একটি বৈশ্বিক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
প্রকল্পটির উদ্যোক্তা হলেন এড নিউটন-রেক্স। তিনি বর্তমানে একটি বড় প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এই পরিবর্তনগুলো শিল্পীদের এক ধরনের ক্ষতি করবে। কারণ, তাঁরা তাঁদের কাজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন না। নিউটন-রেক্স তাঁর প্রচারণায় দাবি করেন, কপিরাইট আইনের পরিবর্তন শিল্পীদের কাজকে সম্পূর্ণরূপে এআই কোম্পানির হাতে তুলে দেবে এবং শিল্পীরা তাঁদের কাজের ব্যবহার ট্র্যাক বা কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
অ্যালবামটি যুক্তরাজ্যে কপিরাইট আইনে পরিকল্পিত পরিবর্তনের ঠিক আগে প্রকাশিত হয়েছে। এ আইনের ফলে এআই প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত নিজেদের সংগীতের ব্যবহারকে বাধা দিতে তাদেরকে সক্রিয়ভাবে ‘অপ্ট-আউট’ করতে হবে।
নিউটন-রেক্স মনে করেন, এটি শিল্পীদের জন্য একটি হারানোর পরিস্থিতি তৈরি করবে। কারণ, এখানে কোনো কার্যকর অপ্ট-আউট পদ্ধতি নেই বা কোনো স্পষ্ট উপায় নেই, যার মাধ্যমে শিল্পীরা জানতে পারবেন, তাঁদের কোন বিশেষ কাজটি এআই সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়েছে।
নিউটন-রেক্স বলেন, ‘আমরা জানি, অপ্ট-আউট স্কিমগুলো সাধারণত ব্যবহৃত হয় না এবং এভাবে ৯০-৯৫ শতাংশ শিল্পীর কাজ এআই কোম্পানির হাতে চলে যাবে।’
শিল্পীরা বলেন, এর সমাধান হলো অন্য বাজারগুলোর জন্য কাজ তৈরি করা, যেখানে তাঁদের কনটেন্ট ভালো সুরক্ষা পাবে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে এর প্রতিবাদে একটি বন্দর থেকে কি-বোর্ড ফেলে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে মিউজিক শেয়ারের জন্য সুইজারল্যান্ডের মতো বাজারগুলো বিবেচনা করছেন তিনি।

আরও দেখুন

এ বিষয়ের আরও সংবাদ

Close