সারাবাংলা
সফটওয়্যার জটিলতায় কমেছে জমি কেনাবেচা, ভোগান্তি
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানের শেখরনগর গ্রামের ইকবাল হোসেন তাঁর ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করতে চেয়েও পারছেন না। এক মাস ধরে নামজারি করতে না পারায় আটকে আছে তাঁর জমি বিক্রি। তিনি বলেন, ‘জমি বিক্রির জন্য নামজারি দরকার। এক মাস ধরে ভূমি অফিসে যাওয়া-আসার মধ্যেই আছি। সফটওয়্যারের সমস্যায় সার্ভার না পাওয়ায় নামজারি করতে পারছি না।’
ভূমি অফিসে ভূমিসেবার মানোন্নয়নে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন সফটওয়্যার চালু হলেও জটিলতা ও ত্রুটি থাকায় এমনই ভোগান্তিতে পড়েছেন মুন্সীগঞ্জের ছয় উপজেলার বহু মানুষ।
ইকবাল হোসেনের মতো একই উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের শিয়ালদী গ্রামের আউয়াল শেখও জমি বিক্রি করতে পারছেন না। আউয়াল শেখ বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে নামজারির জন্য উপজেলা ভূমি অফিসে ছোটাছুটি করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইকবাল হোসেন ও আউয়াল শেখের মতোই মুন্সীগঞ্জ সদরসহ ছয়টি উপজেলার অনেকেই জমির খাজনা দিতে পারছেন না। কেউ কেউ করতে পারছেন না নামজারি। এতে এক মাস ধরে মুন্সীগঞ্জ জেলাজুড়ে জমি কেনাবেচায় ভাটা পড়েছে। দলিল লেখকদের কাজ কমে গেছে। আগের তুলনায় দলিল রেজিস্ট্রিও অর্ধেক কমেছে।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভূমিসেবায় গতি আনতে পাঁচটি সফটওয়্যার একত্র করে ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের আওতায় চারটি সফটওয়্যারের মানোন্নয়ন এবং একটি নতুন উদ্ভাবিত সফটওয়্যার জনগণের ব্যবহারের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এতেই বেধেছে বিপত্তি। সফটওয়্যার চালু হলেও কাজে আসছে না। ওয়েবসাইটে ঢোকা গেলেও ভূমি কার্যালয়ের অ্যাকাউন্ট লগইন করতে সমস্যা হচ্ছে।
জানা গেছে, সার্ভারে সমস্যা হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলার গজারিয়া উপজেলার পুরান বাউশিয়া গ্রামের শরীফ হোসেন। তাঁর ছেলে বিদেশে যাবেন। ইতোমধ্যে ভিসাও পেয়ে গেছেন। অথচ হাতে নেই প্রয়োজনীয় টাকা। অগত্যা ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে ৩০ শতাংশ জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভূমি অফিসে খাজনা দিতে পারছেন না তিনি। ফলে বিক্রি করতে পারছেন না জমিও। এদিকে ছেলের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে বলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শরীফ।
গত বুধবার জেলার টঙ্গিবাড়ীর কাঠাদিয়া শিমুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে জমির খাজনা দিতে পারেননি ধামারণ গ্রামের কাজী শহীদুল ইসলাম শিপন। উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে নামজারি করতে আসা সেবাগ্রহীতার দেখা পেলেও খাজনা আদায়ের রসিদ না থাকায় আটকে গেছে নামজারির কার্যক্রম। একই দিন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে সেখানে জমির দলিল রেজিস্ট্রি কমে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গজারিয়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মিরাজ উদ্দিন জানান, সফটওয়্যারে সমস্যার কারণে নামজারি ও খাজনা আদায় করা যাচ্ছে না। এতে আগে যাদের নামজারি ও কর-খাজনা আদায় করা ছিল, শুধু তাদেরই জমির দলিল রেজিস্ট্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জমির কেনাবেচা অনেক কমেছে। আগে এক মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ দলিল রেজিস্ট্রি হতো। কিন্তু গত এক মাসে মাত্র একশর মতো দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে।
গজারিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন শরীফ বলেন, কারিগরি কিছু ত্রুটির কারণে সার্ভারটি সম্পূর্ণ সচল হয়নি। শিগগির তা সচল হওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ সদরের দলিল লেখক নকিব হোসেন বলেন, আগের তুলনায় অর্ধেকের কম দলিল হচ্ছে। নতুন নামজারি ও কর রসিদ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জমি কেনাবেচা কমে গেছে। তাই তাদের হাতে তেমন কাজ নেই বললেই চলে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মাইকেল মহিউদ্দীন আব্দুল্লাহ্ জানান, গত এক মাসে ভূমি রেজিস্ট্রেশন কমেছে। তবে কিছু কিছু হচ্ছে। আগের তুলনায় আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ ভাগ দলিল কম হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম হাসানুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে সফটওয়্যার আপগ্রেড হয়েছে। তবে এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। তারা সমস্যাগুলো প্রতিনিয়ত ভূমি মন্ত্রণালয়কে জানাচ্ছেন। শিগগির সমস্যা সমাধান হবে বলে তারা জানিয়েছেন।