সারাবাংলা
পানের বরজে শীতের মড়ক, ধারদেনা শোধ নিয়ে অন্ধকার দেখছেন আমতলীর চাষিরা
কপিল মাঝির পানের বরজটি ৭০ শতক জমিতে। চলতি মৌসুমে এখানে পান চাষের জন্য ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তাঁর। এর অধিকাংশই ধারদেনা করে জোগাড় করেছেন। সপ্তাহজুড়ে ঘন কুয়াশার কারণে চোখে অন্ধকার দেখছেন কপিল। বুধবার তাঁর সঙ্গে কথা হয় বরগুনার আমতলী উপজেলার গোছখালী গ্রামে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় তাঁর বরজের সব পানপাতা লাল হয়ে ঝরে গেছে। বছর শেষে দুই লাখ টাকা আয় হবে কিনা, এ নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়েছেন তিনি। এখান থেকে ঋণ শোধ কীভাবে করবেন, পুরো বছর সংসার চালাবেন কীভাবে– প্রশ্ন ছুড়ে দেন কপিল।
গোছখালী গ্রামটি উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নে। একই গ্রামের নজরুল প্যাদা বলেন, ‘এনজিওডে গোনে টাহা লইয়া ৫ লক্ষ টাহা খরচ কইর্যা ৪০ শতাংশ জমিতে পান চাষ করছি। শীত আর কুয়াশায় সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। পাতা সব কইর্যা নষ্ট অইয়া গ্যাছে। এহন এনজিওর টাহা দিমু ক্যামনে হেই চিন্তায় আছি।’
কপিল মাঝি ও নজরুল প্যাদার মতো উপজেলার শত শত পানচাষির একই অবস্থা। আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এবার সাতটি ইউনিয়নের ১৩৩ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। বরাবরের মতো বেশি পান চাষ হয় গুলিশাখালী, চাওড়া, আঠারগাছিয়া ও আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে। শীত মৌসুমের শুরুতে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ তেমন ছিল না। তবে ১০ দিন ধরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় বরজের পানপাতা লাল হয়ে ঝরে যাচ্ছে। পুরো বরজ পলিথিন দিয়ে মুড়িয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। প্রতিটি বরজে চাষিদের লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ। এর বেশির ভাগই ঋণ করে নেওয়া। বহু শ্রমে তৈরি বরজে পানের পাতা এভাবে ঝরে যেতে দেখে কান্না আটকাতে পারছেন না চাষিরা।
মঙ্গল ও বুধবার উপজেলার গুলিশাখালীর গোছখালী, ডালাচারা, চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, ঘটখালী, উত্তর ঘটখালী, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা, ঘোপখালীসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে পান বরজের এমন করুণ চিত্র দেখা যায়। বরজগুলোতে কাঠির সঙ্গে বাঁধা পানের লতা দাঁড়িয়ে থাকলেও পাতা তীব্র ঠান্ডায় শুকিয়ে গেছে। বেশির ভাগই লাল হয়ে ঝরে গেছে।
ঘটখালী গ্রামের পানচাষী আক্কাচ হাওলাদার বলেন, ‘রিমালের সময় বইন্যায় বর ভাইঙ্গা সব শ্যাষ অইয়া গেছিল। ধারদেনা আর এনজিওডে গোনে টাহা আইন্যা আবার বর ঠিক হরছি। এহন শীত কুয়াশা আর বাতাসে সব পান পাতা নষ্ট অইয়া যাওয়ায় মোগো অইছে সর্বনাশ। এহন পোলামাইয়া লইয়া কি খামু আর কি দিয়া এনজিওর কিস্তি দিমু– এহন আছি হেই চিন্তায়।’
পান নষ্ট হওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারেও। খুরিয়ার কেয়াঘাট এলাকার ছফুরা বেগম বলেন, পানের দাম দুই-তিন গুণ বেড়ে গেছে। এক মাস আগে যে পান তিনি ২০ টাকায় কিনেছেন, এখন দাম গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। তাই আগের মতো পান কেনেন না। খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। বুধবার আমতলী শহরের পান বাজার ঘুরে দেখা গেছে এক চল্লি (৩৬টি) বড় আকারের পান বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। ছোট আকারের পানের দাম চল্লিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা। দাম বৃদ্ধির কারণে ছফুরার মতো ক্রেতারা এখন হিসাব করে পান কিনছেন।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেন, ঘন কুয়াশা, অতিরিক্ত শীত ও আবহাওয়া মেঘলা থাকায় পানগাছে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। এ রকম হলে স্বল্প মাত্রায় জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া শৈত্যপ্রবাহের হাত থেকে বরজ রক্ষার জন্য পলিথিন টানিয়ে বেড়া দেওয়া যায়। এতে ছত্রাকের আক্রমণ কম হবে।