জাতীয়

রাষ্ট্র মেরামত: এম সাখাওয়াত হোসেনের  সাথে ভিন্নমত

নুরুল্লাহ মাসুম

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন উপদেষ্টা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সাম্প্রতিক লেখা (প্রথম আলোতে প্রকাশিত) রাষ্ট্র মেরামতের এখনই সময়” শীর্ষক নিবন্ধটি পড়লাম। সময়ের সাথে উপযোগী সুন্দর লেখা। তিনি লেখেন যেমন ভালো, আলোচনাও করেন সুন্দরভাবে। তার লেখার সাথে কিছুটা ভিন্নমত প্রকাশ করে আমার এই লেখা।
জনাব উপদেষ্টা, রাষ্ট্র মেরামতে বিকেন্দ্রীকরণ সম্পর্কে আপনার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, দেশে প্রদেশ ব্যবস্থা চালু করালে জনগণের করের বোঝা বাড়বে। তৈরি হবে প্রদেশকেন্দ্রিক পেশী শক্তি। প্রাদেশিক পার্লামেন্ট চালাতে বিপুল অংকের টাকার প্রয়োজন হবে। আমি মনে করি প্রদেশ না করে বর্তমানে জেলা পরিষদ নামে যে স্থানীয় সরকার রয়েছে সেগুলোকে আরো শক্তিশালী করা হলে এবং পরিষদের হাতে ক্ষমতা প্রদান করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব। সেখানেও নির্বাচন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে জেলা পরিষদ চেয়ারশ্যানসহ সকল সদস্য পদে সরাসরি নির্বাচন হওয়া দরকার। বর্তমান ব্যবস্থায় যে সকল অধিদপ্তর ও দপ্তরের হেড অফিস ঢাকা আছে ড়ণহারে সেগুলোকেও বিকেন্দ্রীকরণ করা প্রয়োজন। যেমন, চা বোর্ড সিলেটে; BIWTC চট্টগ্রামে; BIWTA বরিশালে; বন বিভাগ খুলনা বা গাজীপুরে ইত্যাদি।
আইন বিভাগকে বিকেন্দ্রীকরণ করে প্রতিটি উপজেলায় নিম্ন আদালত স্থাপন করতে হবে, যেমনটি করেছিলেন সামরিক শাসক এরশাদ। এতে করে জেলা ও ঢাকা কেন্দ্রীক চাপ কমবে। হাইকোর্টের বেঞ্চও বিকেন্দ্রীকরণ করে সাবেক চার বিভাগীয় শহরে ৪টি হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করা যেতে পারে।ঢাকাতেও একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ থাকবে। এর ফলে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী, আদালতের বিচারক, অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার উপজেলায় স্থানান্তরিত হবে জেলা শহরগুলোতে এবং ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ কমবে। উপজেলা আদালতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে কর্মসংস্থান; বিপুল সংখ্যক নিম্ন আয়ের মানুষ ঢাকা ও অন্যান্য শহর ছেড়ে নিজ নিজ উপজেলায় চলে যাবে।
আমি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের বিপক্ষে মত প্রকাশ করছি। এখানেও জনগণের উপর করের বোঝা বাড়বে বৈ কমবে না। বরং আরো কিছু সংখ্যক নেতা গজিয়ে উঠবে, যা সুখকর হবে বলে মনে হয় না। মনে রাখতে চাই- উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের জনগণ এখনো গণতন্ত্র কী, তা সঠিকভাবে বোঝে না বা চর্চা করে না।
পুলিশ প্রশাসন বিষয়ে আমার মত হচ্ছে, পুলিশকে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে একটি কমিশনের অধীনে দেয়া যেতে পারে। এতে করে পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের লাঠিয়াল বাহিনী হওয়ার মতো দুর্নাম থেকে রেহাই পাবে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেব।
রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। যদি রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি থাকে, তাহলে কোনভাবেই বিচার বিভাগ স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে না। বিগত ১৬ বছরও বিচার বিভাগ স্বাধীন ছিলো, তবে তা কেবল কাগজে-কলমেই ছিলো, বাস্তবে নয়।
আরেকটা বিষয়ে বলতে চাই। রাষ্ট্রপতি পদটিকে ঠুট-জগন্নাথ বানিয়ে না রেখে তাঁর হাতে কিছু ক্ষমতা দেয়া প্রয়োজন; বলতে চাইছি প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রেখে সংবিধান তৈরি করতে হবে।
সবশেষ কথা, সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রধানতম বাধা হচ্ছে বর্তমান সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ। এটি বাতিল করতে হবে। দেশটাকে বানাতে হবে মন্ত্রীপরিষদ শাসিত দেশ; প্রধানমন্ত্রী শাসিত দেশ নয়। প্রধানমন্ত্রী যে মন্ত্রী নিয়োগ দেবেন, তা সংসদে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। নইলে নিজের পছন্দের (বাড়ি সকলকে) মন্ত্রী বানিয়ে দেশটাকে আবারো “পারিবারিক মন্ত্রীপরিষদ” বা “দাসানুদাস মন্ত্রীপরিষদ” দিয়ে শাসন করে সম্পদের পাহাড় গড়তে দেখতে হবে আমাদের মতো আমজনতার।
আশাকরি, আমার মতো আমজনতা তার লেখার উপর মন্ত্য করছি বলে উপদেষ্ট মহোদয় রাগ করবেন না। তিনি সোজা কথার মানুষ এবং সত্য বলার চেষ্টা করেন; তাই ভরসা করে স্বাধীন ভাবে আমার মতামত প্রকাশ করলাম। নিশ্চিত হতে চাই, এ কারণে নতুন করে কোন আয়নাঘর বা অন্য নামে কিছু দেখতে হবে না।

আরও দেখুন

এ বিষয়ের আরও সংবাদ

Close