ফিচার

স্কাউটিংয়ে দূর্নীতি! প্রসঙ্গ: গঠনতন্ত্র।


আবু মহী উদ্দীন, এলটি

স্কাউটিং বিষয়ে যে সব দূর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে, আমি কেমন জানি এখনো বিশ্বাস করতে পারছিনা। কেননা স্কাউটিং প্রেগ্রামে দুর্ণীতির কোন স্থান নাই।
বৈষম্যের বিলোপ এবং দূর্নীতি নির্মুলের আকাংখা নিয়ে দেশে একটা পরিবর্তন হয়েছে। এ দুটো সমস্যা সমাধান করা বেশ জটিল। এ দুটো সমস্যার সমাধান করতে পারলে বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে। যখনই যারা বিভিন্ন সংগঠনের দ্বায়িত্ব নেন তারা এসব কথা বলেন, আর মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা চালু রেখে তেমন কিছু করা যায়না। পরে যা হয় তার জলন্ত উদাহরণ আমরা অতিক্রম করলাম। এই দুটি ব্যবস্থা বাস্তবায়নে ব্যবস্থাটা কি হলে তা সম্ভব হবে এনিয়ে বিজ্ঞজনেরা মতামত দিবেন। এই সব মতামত পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নিলে এবং তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করলেই তা সহজ হবে।
স্কাউটিং একটি শিক্ষা আন্দোলন এবং সৎ ও চরিত্রবান আদর্শ নাগরিক তৈরি করার সংগঠন। কিন্তু বর্তমান সময়ে যে সব তথ্য উপাত্ত অভিযোগ জাতির সামনে উপস্থাপিত হচ্ছে, তাতে বিষয়টা প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈষম্য এবং দূর্নীতি দুটো আলাদা ক্ষত। তবে চিকিৎসাটা বিপরীতমুখী কিন্তু একে অপরের পরিপুরক।
বৈষম্য তৈরি করার উপাদান এর গঠনতন্ত্রেই করা আছে। যদি জাতীয় পর্যায়ের বিষয়টাই আলোচনা করা যায় তাহলে দেখা যায়, এ পর্যায়ে ১জন সভাপতি, ১ জন সহ সভাপতি, ১জন কোষাধ্যক্ষ মাত্র এই ৩ টি পদে নির্বাচন হবে। প্রধান জাতীয় কমিশনার কাউন্সিল কর্তৃক সুপারিশকৃত হবেন। ২০০৮ সালে চর দখল প্রক্রিয়ায় প্রধান জাতীয় কমিশনারকে আগাম কাউন্সিল দিতে বাধ্য করা হয়। কেবলমাত্র প্রধান জাতীয় কমিশনার পদে নির্বাচন হলো। এর আগে কখনো নির্বাচন হয়নি।
বাংলাদেশ স্কাউটস-এর প্রধান জাতীয় কমিশনার নির্বাচিত হবার পর তিনি বাংলাদেশ কেন পৃথিবীর যে কোন সংগঠনের তুলনায় স্বৈরশাসক হতে পারেন। তিনি স্কাউট সংগঠনে একমেবাদ্বিতীয়ম। তিনি যে কোন ২০ জনকে জাতীয় কমিশনার পদে মনোনয়ন দিবেন। এ মনোনয়নে কারো পরামর্শ বা মতামত নেওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা নাই। তাঁর পছন্দমতো যে কাউকে মনোনীত করতে পারবেন। এই ২০ জনই আবার জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হবেন। আরো ৩ জন তিনি জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে সহযোজিত সদস্য হিসাবে মনোনয়ন দিবেন। আর একটা নাটক আছে, এই ২০ জন আবার আরো ৪০ জনকে মনোনয়ন দিবেন। তাদের পদ হবে জাতীয় উপকমিশনার। তিনি আবার প্রতিটি অঞ্চল থেকে ১ জন করে মনোনীত করতে পারবেন।
এই ৭১ জন মানুষ, যারা কিনা স্কাউট সংগঠনের দন্ডমুন্ডের কর্তা হবেন, যারা স্কাউট আন্দোলন পরিচালনা করবেন, নীতি নির্ধারণ করবেন, তাদের কোন স্কাউট ব্যাকগ্রউন্ডের দরকার নেই, স্কাউটিং তো করেননি, এমনকি সংগঠনের নামই শোনেননি, সেটা কোন বাধা নয়। শুধু মাত্র যোগ্যতা প্রধান জাতীয় কমিশনারের পছন্দের লোক হতে হবে। এ ছাড়াও অঞ্চল থেকেও তার পছন্দের লোককে কাউন্সিলার করতে পারবেন। এই সব যোগ্য (?) লোকেরাই সংগঠন পরিচালনা করছেন দীর্ঘদিন। আর এই সংগঠনে যে কেউ কিয়ামত পর্যন্ত দ্বায়িত্বে থাকতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা গঠণতন্ত্রে করা আছে, এবং সে সবের জন্য নির্বাচন করতে হবেনা। একজন সদস্য নিরচ্ছিন্নভাবে ১৮০ বছর আবার ১৮০ বছর এভাবে অনন্ত কাল ধরে ১৮০ বছর করে দ্বায়িত্ব পালন করতে পারেন।
বিপরীত ক্রমে সারা দেশের হাজারো স্কাউট লিডার যারা কাব বয়স থেকে ৩০/৪০ বছর ধরে স্কাউটিং করেন, অসংখ্য ট্রেনিং কোর্স করেছেন, ইউনিট পরিচালনা করেছেন, র্যা লি জাম্বুরীতে অংশগ্রহণ করেছেন, অসংখ্য ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন, স্থানীয় সংগঠন পরিচালনায় ভুমিকা রেখেছেন। এসব কোন যোগ্যতা কোন মানদন্ডই নয়। তাদের জাতীয় পর্যায়ে দ্বায়িত্ব পালনের কোন সুযোগ নাই। এটা কি কোন গঠনতন্ত্র হতে পারে?
স্কাউটদের সংগঠন স্কাউটরাই পরিচালনা করবে। যার কোন স্কাউটিং ব্যাকগ্রাউন্ড নাই তিনি কেন এই সংগঠনের কর্ণধার হওয়ার সাহস রাখেন? প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপর দিকে তাকিয়ে থাকেন। যখন দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব সভাপতি, দুদক কমিশনার প্রধান জাতীয় কমিশনার সুতরাং তারা অতি আগ্রহী হয়ে যান তাদের প্রয়োজনে। উর্ধতনের নজরে আসার জন্য এই আগ্রহ দেখাতে গিয়ে সংগঠনের গঠনতন্ত্র ভুলুন্ঠিত করেন। স্কাউট লিডারদের কোন মতামতের তোয়াক্কা করেননা। এ বিষয়ে ২/৩টি উদাহরণ দিতে চাই। (১) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা স্কাউটস এর কাউন্সিল। কমিটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ, ৬ মাসের অতিরিক্ত মেয়াদ শেষ, এ্যডহক কমিটির মেয়াদ শেষ। কাউন্সিল সভা আহবান করা হয়েছে। কাউন্সিলার তালিকায় মৃত মানুষেরও নাম আছে। তালিকা প্রকাশ করাও হয়নি। সুতরাং কাউন্সিল বন্ধ। এখন গঠনতন্ত্র পাশে রেখে কাউন্সিল হবে কিনা তা কেউ জানেনা। এডহক কমিটির পর তো আর কিছু নাই। এই ঘটনা ঠাকুরগাঁও জেলা এবং উপজেলা সংগঠনের নিয়মিত ঘটনা।
উদাহরণ (২) জয়পুরহাট জেলা। ডিসি সাহেব মনে করলেন, কমিটির সম্পাদক, কমিশনার তার পছন্দমতো হওয়া দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। গঠনতন্ত্রের মতো পুস্তক কোন কাজে আসলোনা। এডিসি সাহেবকে কমিশনার না করতে পারলে তার মান থাকেনা। কমিটি ভেঙ্গেচুরে গুড়া করলেন। তিনি সরাসরি এডিসিকে কমিশনার করবেন। বাদ দেওয়া হলেও সম্পাদক সাহেব পরামর্শ দিলেন এভাবে তো করা যাবেনা। এডিসিকে আগে কাউন্সিলার হতে হবে। কাউন্সিলার হতে হলে তখন একমাত্র উপায় উপজেলা থেকে প্রতিনিধি হিসাবে আসতে হবে। নজীরবিহীন ঘটনা ঘটলো । কয়েক ঘন্টার মধ্যে সদর উপজেলা স্কাউটের প্রতিনিধি হয়ে আসলেন এডিসি সাহেব। যা হবার সামান্যতম সুযোগ নাই। তিনি কমিশনার হলেন। জেলা শিক্ষা অফিসার হলেন সম্পাদক। কাউন্সিলার না হলেও সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হলেন ট্রেজারার। এই সব দুর্ঘটনা ঘটলো জয়পুরহাট জেলার দ্বায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ স্কাউটস এর কর্মকর্তা, স্কাউটের সহকারি পরিচালক আনোয়ার হোসেন সাহেবের পরামর্শে। যেহেতু ডিসি সাহেব চেয়েছেন। আনোয়ার হোসেন সাহেব নিয়মাবলী লিখিতভাবে ডিসি সাহেবকে জানাতে পারতেন। এর পর যা ঘটলো, জেলা শিক্ষা অফিসার বদলী হলেন, ডিসি সাহেব নুতন সম্পাদক করলেন জেলা ক্রীড়া অফিসারকে। তিনি তো সংগঠনের কোন স্তরেই নাই। কাউন্সিলারতো ননই। ক’দিন পর তিনি বদলী হয়েছেন। একজন ভারবাহী হয়েছেন। ট্রেজারার বদলী হয়েছেন। কেউ ট্রেজারার হয়নি। কমিশনারতো বদলী হয়েছেন কবে, সে পদেও কেই নাই। অবশ্য ডিসি সাহেবও বদলী হয়েছেন। নুতন ডিসি সাহেব এসে এতো গুলো অনিয়ম মেরামতের ঝামেলা বহণ করেননি।
উদাহরণ (৩) রাজশাহী আঞ্চলিক স্কাউটস এ অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সম্পাদক হলেন গায়ের জোরে। সম্পাদক সাহেব তার কাজের জন্য কমিশনারের নিকট দ্বায়ী। তার তো সম্পাদক হওয়ার কোন সুযোগ নাই-ই। আবার ডিডি মাধ্যমিক শিক্ষা যেখানে কমিশনার সেখানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কোন বিবেচনায় সম্পাদক হন?
অনুরুপ ব্যবস্থা বিভাগীয় পর্যায়ে। সহ সভাপতি, সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ এসব পদে নির্বাচন হবে। কোন কোন অঞ্চলে আঞ্চলিক কমিশনার মোটামুটি ভাবে পদাধিকারবলে ডিডি মাধ্যমিক শিক্ষা। এখানেও কমিশনার ১৪ জন আঞ্চলিক উপ কমিশনার, ২ জন সহযোজিত সদস্য নিয়োগ করতে পারবেন নির্বাহী কমিটিতে। এবিষয়ে কারো কোন মতামত নিতে হবেনা। জেলা পর্যায়েও কমিশনার ৯ জন নিয়োগ করতে পারবেন। উপজেলা পর্যায়েও তাই। খোজ নিলে দেখা যাবে স্কাউট সংগঠন পরিচালনায় এই সব অতি গুরুত্বপুর্ণ (?) স্কাউট দরদীদের নিজেরাতো স্কাউটিং পছন্দ করেননি, পছন্দ করলেতো ছাত্রজীবনে স্কাউটিং করতেন। স্কাউটিং যদি খুবই ভালো প্রোগ্রাম হয় এবং তা যদি বালকদের সৎ ও চরিত্রবান করে গড়ে তোলে তাহলে তাদের ছেলেমেয়েদের চরিত্র গঠণের কি কোন প্রয়োজন নাই? অথচ এই ভালো প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য তিনি গলদঘর্ম হচ্ছেন কিন্তু তার ছেলেমেয়েরা স্কাউটিং করেনা।

আরও দেখুন

এ বিষয়ের আরও সংবাদ

Close