ফিচার

বাংলাদেশ স্কাউটস : বর্তমান প্রেক্ষাপটে আশু করণীয়

নুরুল্লাহ মাসুম

গত ২ জুন ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ স্কাউটস-এর জাতীয় কাউন্সিলে ঘটে যাওয়া বিব্রতকর কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে আজকে স্কাউটিং নিয়ে কলম ধরা। সঙ্গত বা অসঙ্গত, যে কারণই ধরা যাক বা বলা হোক না কেন, ২০০৮ সালের পর থেকে স্কাউটিং থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলাম। ২০১৩ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির “চিফ স্কাউট” হিসেবে দায়িত্ব পালন নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে হাসনাইন ভাইয়ের সাথে যৌথভাবে রিট করে ৩১ জুলাই ২০১৩ রুল পেয়েছিলাম। তখন স্কাউট অঙ্গণের বিজ্ঞ (!) লোকজন আমাদের পাশে না থাকায় আমারা চুপ করে গেছিলাম। যদিও সেই রিটের কারণে মহামান্য হাইকোর্টের রুলের উপর সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত একই বছরের ৫ আগস্ট ৮ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানীর আদেশ দিয়েছিলন। এরপরে কী হয়েছে, কবে শুনানী হলো, রায় কী হলো; কোনকিছুই আমাদের জানা হয়নি। বাদীদের অনুপস্থিতিতেই হয়তো শুনানী হয়ে থাকবে। কোন খোঁজ নেয়ার তাগিদ অনুভব করিনি। তবে সেই রিটের কারণে একটা ফলাফল এসেছিলো- বাংলাদেশ স্কাউটস আইন-২০২০ এর খসড়া প্রস্তুত হয়েছিলো ২০১৯ সালে এবং সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আইন শাখা-২ থেকে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ৮টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ব্যানবেইস, নায়েম ও মাউশি’র মহপরিচালক এবং টেক্সট বুক বোর্ডের চেয়ারম্যান বরারব পত্র মারফত বর্ণিত আইনের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছিল। এবিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি নজরে আসেনি। লক্ষ্য করার মতো দিক হচ্ছে, প্রণীত আইনের খসড়ার বিষয়ে স্কাউটিং বিষয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কারো কাছে ভেন্ডিংয়ের জন্য পাঠানো হয়নি। আমাদের সফলতা এটুকুই যে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি অধ্যাদেশ (রাষ্ট্রপতির আদেশ ১১১/৭২ তারিখ- ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৭২) জারীর দীর্ঘ ৪৮ বছর পরে স্কাউটিং নিয়ে একটি আইন প্রণয়নের কাজ হতে যাচ্ছে।
স্কাউট অঙ্গনে বহুল চর্চিত রাষ্ট্রপতির আদেশ-১১১/৭২। কী ছিলো রাষ্ট্রপতির সেই ১১১ নং আদেশে? মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ১১১ নম্বর আদেশ বলে পাকিস্তান বয় স্কাউট সমিতিকে “বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি”হিসেব নামকরণ করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয় এবং পূর্বোক্ত “পাকিস্তান বয় স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯ রহিত করা হয়। ১৯৭৮ সালে Bangladesh Boy Scouts Samity (Amendment) Ordinance, 1978 (Ordinance No. LIV of 1978) বলে “বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতি-র নাম পরিবর্তন করে “বাংলাদেশ স্কাউটস” করা হয়। সর্বশেষ সংশোধনীতেও রয়েছে এই কথাগুলো:

  1. The constitution, powers and functions of the Bangladesh Scouts be such as may be prescribed by rules to be made by the Bangladesh Scouts with the previous approval of the Government, and until such rules are made, the rules of the Pakistan Boy Scouts Association and in force immediately before the commencement of this Order shall continue to be in force and be deemed to have been made under this Order.
    বৃটিশ আমলেই বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডে স্কাউটিং শুরু হলেও প্রথম দিকে তা কেবল এ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ভারত বিভাগের পর পাকিস্তানের প্রদেশ হিসেবে পূর্ব বাংলায় (পরে পূর্ব পাকিস্তান) স্কাউটিং কার্যক্রম চালু থাকে। ১৯৫৯ সালে প্রথমবারের মত পাকিস্তানে স্কাউট কার্যক্রমের আইনী বৈধতা আসে একটি অর্ডিন্যান্স বলে যেটি “পাকিস্তান বয় স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন অর্ডিন্যান্স-১৯৫৯” শিরোনামে পাকিস্তানের সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ূব খান কর্তৃক জারী করা হয় ২৯ জুলাই ১৯৫৯ খৃষ্টাব্দে (Ordinance No. XLIII of 1959)। এবিষয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশিত হয় ১৪ আগস্ট ১৯৫৯ তারিখে। এবারে আমরা পাকিস্তানের সেই অর্ডিন্যান্সের প্রয়োজনীয় অংশটুকু দেখে নিতে পারি:
  2. Incorporation of Association. Notwithstanding anything in the Societies Registration Act, 1860 (XXI of 1860), or in any other law, the Pakistan Boy Scouts Association, for the time being registered there under, shall, on the commencement of this Ordinance, cease to be so registered, and shall be deemed to be a body corporate, by the name of the Pakistan Boy Scouts Association (hereafter in this Ordinance referred to as the Association), having perpetual succession and a common seal, with power, subject to the rules made or deemed to have been made under section 3, to acquire, hold and dispose of property, movable or immovable, for the purposes of the Association, and shall by the said name sue and be sued.
  3. Constitution powers and functions of Association. The constitution, powers and functions of the Association shall notwithstanding anything in the Companies Act, 1913 (VII of 1913), be such as may be prescribed by rules to be made by the Association, with the previous approval in writing of the 2[Federal Government], and until such rules are made, the rules of the Pakistan Boy Scouts Association registered under the Societies Registration Act, 1860 (XXI of 1860), and in force immediately before the commencement of this Ordinance, shall continue in force and be deemed to have been made under this section.
    বাংলাদেশে স্কাউটিং সংক্রান্ত কোন আইন তৈরী করেনি যা মহান জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে বা অনুমোদিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান বয় স্কাউটস অ্যাসোসিয়েশন অর্ডিন্যান্স মতে চলতে হয়। এবিষয়ে কারো কোন সন্দেহ করার অবকাশ কি রয়েছে? প্রসঙ্গত বাংলাদেশের পূর্বসূরী পাকিস্তান এবং তারও পূর্বসূরী ভারতে স্কাউটিং কোন্ আইনে চলছে তা দেখে নেয়া যেতে পারে:
    THE BHARAT SCOUTS AND GUIDES IS Registered Society under Societies Registrations Act. It is totally voluntary, non-political and secular Organisation. (সূত্র: www.bsgindia.org)
    প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশ স্কাউটস-এর সাথে বিজ্ঞ ব্যুরোক্র্যাটগণ দীর্ঘ সময় ধরে যুক্ত থেকেও কেন উপযুক্ত সময়ে উপযোগী আইন প্রণয়ন করলেন না? অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বাংলাদেশ গার্ল গাইডস এসোসিয়েশন ১৯৭৩ সালেই তাদের সংগঠন চালানোর জন্য পূর্বতন The Girl Guides Association Ordinance, 1960 (Ord. XLIV of 1960) বাতিল করে The Bangladesh Girl Guides Association (Act No. XXXI of 1973) পাশ করিয়ে নেয়। বিজ্ঞব্যক্তিবর্গ কী বলবেন এ বিষয়ে!
    পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তান বয় স্কাউটের কর্তাব্যক্তিরা ছিলেন শিক্ষা বিভাগের। জাতীয় পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত। কোন পর্যায়েই প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এর সাথে অফিসিয়ালি যুক্ত ছিলেন না। দু’চার জন যারা যুক্ত ছিলেন, তারা প্রথমে স্কাউট পরে প্রশাসনে কর্তা হয়েছিলেন। এখনকার মতো সরকারি কর্তা হলেই স্কাউট ব্যক্তিত্ব হবেন পদাধিকার বলে- এমনটা কখনোই ছিলো না; এমন কি স্বাধীন বাংলাদেশেও না। বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতির প্রথম জাতীয় কমিশনার ছিলেন সিএসপি অফিসার জনাব পি এ নাজির, তিনি একজন উডব্যাজধারী স্কাউটার ছিলেন। জাতীয় পর্যায়ের সকল বড় বড় পদে যারা ছিলেন সকলেই শিক্ষা বিভাগের এবং স্কাউটিং-এ আগে থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন তারা। ইপিসিএস অফিসার জেড এ শামসুল হকও উডব্যাজধারী ছিলেন, পরবর্তীতে তিনি লিডার ট্রেণার হন। ১৯৭৫ সালে বিশেষ কারণে পিএ নাজির জাতীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে নুরুলিসলাম শামস (যুগ্ম সচিব) জাতীয় কমিশনারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনিই ২৫ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চীফ স্কাউট হিসেবে দীক্ষা প্রদান করেন।
    তখন পর্যন্ত স্কাউটিং চলতো “পলিসি, রুল অ্যান্ড অর্গানাইজেশন (POR)” দ্বারা। তখন কোন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাগণ পদাধিকার বলে স্কাউটের কোন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন না। সকল পর্যায়ের (জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা ও স্থানীয় স্কাউটস) সকল পদে নির্বাচিত স্কাউটারগণ দায়িত্ব পালন করতেন। তখনো সকল পর্যায়ের “কমিশনার” ছিলেন মূখ্য নির্বাহী। এখনো আছেন, তবে জাতীয় পর্যায় ছাড়া সকল পর্যায়ে পদাধিকারী সভাপতিদের জন্য কমিশনারগণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। তখন পর্যন্ত একমাত্র “চীফ স্কাউট” পদটি ছিলো পদার্ধকারী- মহামান্য রাষ্ট্রপতির জন্য।
    তারপরের ইতিহাস- স্কাউট/স্কাউটারদের দুঃখ-ভারাক্রান্ত ইতিহাস। বিশেষত এবং মূলত বাংলাদেশে সামরিক শাসকদের হাতেই স্কাউটিং এর স্বকীয়তা/ সৌন্দর্য হারিয়েছে এবং সে সকল কাজের ইন্ধন যুগিয়েছে প্রশাসন- নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে পূর্বতন “পলিসি, রুল অ্যান্ড অর্গানাইজেশন (POR)” বাতিল করে নতুন করে অনুমোদন করা হয় “গঠন ও নিয়ম”। এটি ধর্মীয় সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ২৪-৫-৭৯ তারিখের এস-৭/১০/আর-৪/৭৮/৪০২ (সং-ক্রী) নম্বর মেমোতে অনুমোদিত হয়। সেখানেও স্কাউটিং-এর কোন পর্যায়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের “পদাধিকার বলে” কোন স্থান ছিলো না। সেখানে বিভাগীয় কমিশনারদের ৪টি প্রশাসনিক অঞ্চলে “চীফ প্যাট্রন” রাখার বিধান ছিলো (ধারা-৪২)। ধারার-৪৩ বলে আঞ্চলিক স্কাউটসের সভাপতির পদটি ছিলো কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে নির্বাচিত পদ। জেলা/স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসকগণ ছিলেন “চীপ প্যাট্রন” (ধারা-৪৯-ক)। একইভাবে জেলা স্কাউটসের সভাপতি পদটিও ছিলো নির্বাচিত। তখন প্রশাসনিক জেলাগুলো জেলা স্কাউট সমিতি এবং মহকুমায় ছিলো স্থানীয় স্কাউট সমিতি। কোন পর্যায়েই পদাধিকারবলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য কোন পদ সংরক্ষিত ছিলো না। এরশাদের সামরিক শাসনামলেই মূলত স্কাউটিংয়ে স্কাউট লিডারদের জন্য দুর্দশা নেমে আসে এবং প্রশাসনের কর্তাগণ স্কাউটসের বিভন্ন পর্যায়ের পদগুলো আকড়ে ধরেন।
    বাংলাদেশ বয় স্কাউট সমিতির সভাপতি ছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী (তখনকার অর্থমন্ত্রী) তাজউদ্দীন আহমেদ (৮-৪-৭২ থেকে ১৯-৭-৭৫) । দ্বিতীয় সভাপতি ছিলেন ড. মোজাফ্ফর আহমে চৌধুরী (২০-৭-৭৫ থেকে ১৭-৬-৭৮)। তৃতীয় সভাপতি ছিলেন বিচারপতি আফম আহসানউদ্দীন চৌধুরী (১৮-৬-৭৮ থেকে ১৭-১০-৮৪)। তিনি সামরিক শাসক এরশাদ কর্তৃক দেশের রাষ্ট্রপতি নিয়োজিত হলে এম. মহবুব-উজ-জামান সভাপতি হন ১৮-১০-৮৪ তারিখে। তিনি একটানা ১৬ বছর দায়িত্ব পালনকালেই মূলত “গঠন ও নিয়ম’-এর আমূল পরিবর্তন করেন এবং নতুন করে “গঠর ও নিয়ম” অনুমোদন করান করেন সভাপতি হিসেবে। তারপর থেকে জাতীয় কিমটির সভাপতির পদটি ব্যুরোক্র্যাটদের দখলে। তাঁর আমলে ১৯৮৭ সালের ২৩ মে অনুষ্ঠিত ১৩তম জাতীয় কাউন্সিলে অনুমোদন করা হয় নতুন “গঠন ও নিয়ম”; যা মিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাঃ/২/১/এস-৭/৮৬/৫০৩ স্মারকে অনুমোদিত হয়।
    এই নতুন নিয়মে অঞ্চল পর্যায়ে সভপতির পদটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়রম্যানেদর জন্য সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। জেলা স্কাউটের সভাপতির পদ সুনির্দিষ্ট করা হয় জেলা প্রশাসকদের(DC) জন্য এবং উপজেলা স্কাউটসের সভাপতির পদটি সুনির্দিষ্ট করা হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO)দের জন্য (ধারাসমুহ যথাক্রমে ৪৫, ১১০, ১৯৭)। অন্যান্য পদসমুহ স্কাউটারদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হলেও কালক্রমে প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ নানাবিধ কারণে দখল করতে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে- আঞ্চলিক কমিশনারের পদটি উন্মুক্ত হলেও শিক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালকগণ এমনভাবে সেটি দখল করতে শুরু করেন যে, তারই অধীনস্থ বা নিয়ন্ত্রনাধীন শিক্ষকগণ সে পদের জন্য নির্বাচন করার সাহস দেখাতেন না, আসলেই তা সম্ভব ছিলো না।জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও এমনটি ঘটতে শুরু করলো, সেখানে জেলা বা উপজেলা শিক্ষা অফিসারগণ এই পদটি দখল করতে থাকেন পর্যায়ক্রমে। ধারা এমন হয়ে যে, অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পদটি কাগজে-কলমে স্কাউটাদের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও সেটি বাস্তবে ঐ সকল কর্মকতাদের জন্য অলিখিথভাবে নির্দিষ্ট হয়ে যায়। স্কাউটিং যেহেতু স্কুল-কলেজে বিস্তৃত, শিক্ষকরাই নেতঋত্ব দেন তৃণমূল পর্যায়ে, সেখানে সেই শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণ কর্তপক্ষের নির্দেশনার বাইরে কাজ করা অসম্ভব হয়ে ওঠে। ফলে যারা তৃণমূল থেকে স্কউটিং করে ক্রমে ক্রমে উপরের দিকে এগিয়েছন, তারা স্কাউটিং-এ নেতৃত্ব দেয়া থেকে একপ্রকার বিতারিত হয়ে গেলেন।
    প্রশ্ন হলো, দেশ স্বাধীনের প্রায় দেড় যুগ পরে কেন প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ হঠাৎ করেই স্কাউটিং-এ এত আগ্রহী হয়ে উঠলেন? বলে রাখা ভালো, “গঠন ও নিয়ম” তৈরি করার পরও অনেক জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তাকে স্কাউটিং বিষয়ে আগ্রহী হতে দেখা যায়নি- তাদের কাছে এটা ছিলো একটা বোঝা স্বরূপ। এমনিতে তারা প্রশাসনে নিজ নিজ পর্যায় অনেকগুলো কমিটির প্রধান হিসেবে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন। স্কউটিং এর ব্যাপারে তাদের আগ্রহ কম ছিলো- দু’চারজন ব্যতিক্রম ছিলেন অবশ্যই। জেলা বা উপজেলা কমিশনার/সম্পাদকগণ ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে সভাপতির দেখা পেতেন। চিত্রটা উল্টে যায় তখনই, যখন ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ২১-৮-৭৮ তারিখে সংস্কৃতি উপদেষ্টা (Cultural Adviser) স্বাক্ষরিত S-VII/13p-6/77/779/150/-(C & S) স্মারকে সরকারী কর্মকর্তাদের স্কাউট কার্যক্রমে যোগদানকে সরকারী কর্ম হিসেবে গণ্য করা এবং নিয়মানুসারে TA/DA প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বিষয়টি ১৯৮৭ সালের পরে জোর প্রচারণা চালানো হয় প্রশাসকদের স্কাউটিং-এ অধিকতর সম্প্রক্ত করার লক্ষ্যে। ফলে সকল স্তরে শিক্ষা বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা ছাড়াও দ্রুত এগিয়ে আসেন প্রশাসনের কর্তাগণ- স্কাউটিং-এর কাজে। বর্তমানে জেলা পর্যায়ে স্কউট কমিশনার হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের (ADC) দেখা যায় বহুস্থানে। একইভাবে উপজেলা পর্যায়ে এগিয়ে আসছেন এসি-ল্যান্ড (AC- Land)গণ। ফলে মাঠে-ময়দানে কষ্ট করে যারা স্কাউটিং করেন, সেই স্কাউট লিডারগণ ক্রমে অচ্ছুৎ নাগরিকে পরিণত হচ্ছেন। এছাড়াও, উপজলো পদ্ধতি চালু হবার পর, প্রতিটি উপজেলা স্কাউটসের জন্য বার্ষিক থোক বরাদ্দের ঘোষণা আসে। তখন এ কাজ টি করেছিলে তখনকার বাংলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি, মন্ত্রীপরিষদ সচিব পরে মন্ত্রী মহবুবউজ্জামান।এরপর থেকেই প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ স্কাউটিং করাকে একটি দায়িত্ব হিসেবে মেনে নেয় আন্তরিকভাবে। আর এই সার্কুলারটিই স্কাউটিংকে সব থেকে বেশী ক্ষতগ্রস্থ করেছে। স্বেচ্ছাসেবী স্কাউট আন্দোলন হয়ে ওঠে বাধ্যতামূলক সংগঠন।
    এরই ফলশ্রুতিতে একটা ধারণা হয়ে গেছে- প্রশাসনের কর্তাগণই হবেন স্কাউটসের কর্তা। ১৯৭৮ সালে “জাতীয় কমিশনার” পদটির নতুন নামকরণ করা হয় “প্রধান জাতীয় কমিশনার”। এ পদে প্রথম থেকেই ব্যুরোক্র্যাটগণ আছেন। নুরুলিসলাম শামস (CSP Officer) এর অকাল মৃত্যুর পর মনযূর উল করীম (CSP Officer) দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং টানা ২০ বছর এবং তারপরে মুহ. ফজলুর রহমান (CSP Officer) সাড়ে আট বছর প্রধান জাতীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর প্রথমবারের মতো একজন রাষ্ট্রপতি রোভার স্কাউট অ্যাওয়ার্ডধারী আবুল কালাম আজাদ (BCS Admin) ২০০৮ থেকে ৬ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোজাম্মেল হক খান (BCS Admin)। দীর্ঘ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করার পর তিনি নির্বাচন আয়োজন করেন। তিনি নিজে সভাপতি হতে চাইলেন। নিজের মনোনীত ব্যক্তিকে প্রধান জাতীয় কমিশনার করার জন্য নিজের কমিটির মেয়াদের অতিরিক্ত সময়ে হঠাৎ করার জন্যই নতুন একজন জাতীয় কমিশনার নিয়োগ প্রদান করেন।শুরু হয় ঝামেলা।
    ২০১৩ সালে যে রিট আবেদন করেছিলাম, সেখানে স্কাউটিং-এ সকল পর্যায়ের পদাধিকার বলে কোন পদ না রেখে সকল স্তরে প্রকৃত স্কাউট লিডারদের নিয়োগের জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। দুঃখের সাথে বলতে হয়, তখন অনেক বিজ্ঞ স্কাউট লিডারগণ আমাদের সমর্থনে এগিয়ে আসেননি। আজকের দিনে, এই পর্যায়ে এসে তারা বুঝতে পারছেন, অমনটাই হওয়া উচিত। না হওয়ার কারণে একজন পদাধিকারবলে অধীষ্ঠিত স্কাউটের জাতীয় পর্যায়ের নেতা প্রকৃত স্কাউট লিডারকে বলতে পারতেন না বা সাহস দেখাতেন না- “আপনি সভাপতি হয়ে প্রশাসনকে বাদ দিয়ে কী করে স্কাউটিং চালান আমরা দেখে নেবো”!
    বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি রোভার স্কাউট আবল কালাম আজাদ, আমাদের সকলের প্রিয় আজাদ ভাই। তিনি একজন প্রথমত আইনজীবী, পরে ব্যুরোক্র্যাট। প্রশাসনের উচ্চতর পর্যায়ে কাজ করেছেন। বর্তমানে সংসদ সদস্য। তিনি যখন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার (CNC) নিয়োজিত হলেন, তখন সকল স্কাউটার স্বস্তি পেয়েছিলো এই ভেবে যে, এবার স্কাউটিং সঠিক পথে চলবে। আমি সবচেয়ে বেশী হতাশ হয়েছি, তার হাত ধরেই স্কাউটিং হারিয়েছে “স্বেচ্ছাসবী সংগঠনের” চারিত্রিক বৈশিষ্ট। তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন ২২টি অধিদপ্তরের মধ্যে একটি অধিদপ্তরে রুপান্তরিত করেছেন (দ্রষ্টব্য: https://bangladesh.gov.bd/site/view/ministry_n_directorate_list) স্কাউটসের ওয়েব-সাইট সরকারিকরণ করেছেন (https://scouts.gov.bd/)। এমনকি সংসদ সদস্য হওয়ার পর একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির হয়ে নিজের পি.এস (PS) হিসেব স্কাউটসের একজন উপ-পরিচালককে নিয়োগ দেয়ার সময়ও বাংলাদেশ স্কাউটসকে “অধিদপ্তর” হিসেব দেখিয়েছন। মাননীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মূখ্য সচিব নয়, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি রোভার স্কাউট (RRS বর্তমানে যা PRS নামে পরিচিত) প্রিয় আজাদ ভাইয়ের কাছে অধম একজন স্কাউটার (আপনাদের ভাষায় সাবেক লিডার ট্রেনার) হিসেবে আমার সবিনয় জানতে চাওয়া- আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্কউট কি গঠন ও নিয়মের ৩(ক) ধারায় বর্ণিত “বাংলাদেশ স্কাউটস সরকার বা কোন সংস্থা, গোষ্ঠী ও ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ-নিরপেক্ষ স্বেচ্ছাধর্মী একটি প্রতিষ্ঠান” বৈশিষ্ঠ হারায়নি? গঠন ও নিয়ম-এর ৩ নম্বর ধারার (ক) ও (ঙ) উপধারা দু’টি কি আপনার নেতৃত্বে ব্যত্যয় ঘটনো হয়নি? স্কাউটারদের উদ্দেশ্য বিপি’র শেষ বাণীতে বর্ণিত এই অংশ “You will do well to keep your eyes open, in your turn, for worthy successors to whom you can, with confidence, hand the torch. (যখন আপনারা উত্তরসূরী নির্বাচন করবেন, চোখ-কান খোলা রাখতে সচেষ্ট থাকবেন এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে এই মশাল হস্তান্তর করবেন।)“ কি আপনি সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছেন? একজন অভিজ্ঞ, দক্ষ ও জাত-স্কাউট হিসেবে নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করে দেখবেন আজাদ ভাই, এটাই আমার বিশ্বাস।
    বাংলাদেশে বর্তমানের স্কাউটিং নিয়ে অনেক কথা বলার আছে, সে জন্য দরকার বৃহদপরিসরের। আপাতত স্কাউটিংয়ের স্বার্থে যতটুকু কথা বলার দরকার সেটুকুই বলছি। পরে বিস্তারিত আলোচনা সময় নিয়ে করা যাবে।
    চলমান গঠন ও নিয়ম অনুসারে অঞ্চল, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান না করতে পারলে মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত সময়েও নির্বাচন না করতে পারলে এডহক কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। যদিও সেটি কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়, কারণ যে কমিটি নির্ধারিত অতিরিক্ত সময়েও নির্বাচন করতে সক্ষম হয় নাআ, সেই কমিটির সভাপতির নেতৃত্বেই এডহক কমিটি গঠিত হয়! তবে জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্ষেত্রে মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও ব্যর্থতার কারণে এডহক কমিটি গঠন করার কোন বিধান নেই।
    ফলে দেখা দেয় বিপত্তি। বৃহত্তর এই শিশু-কিশোর-যুবা সংগঠনটির ত্রৈবার্ষিক কাউন্সিল সভার নির্ধারিত তারিখ ছিলো ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর ২০২৩। নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠান না করে নির্বাহী কমিটির মেয়াদ ৬ মাস বৃদ্ধি করে ৫ জুন পর্যন্ত করা হয়। এই বর্ধিত সময়ে তখনকার প্রধান জাতীয় কমিশনার, দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) ও সাবেক সিনিয়র সচিব ড. মো মোজাম্মেল হক খান মহামান্য রাষ্ট্রপতির দপ্তরে বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে আরেক সাবেক কেবিনেট সেক্রটারি (যিনি অবসর নেয়ার পর আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন) জনাব কবির বিন আনোয়ারকে বিধিবহির্ভুতভাবে জাতীয় কমিশনার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এই কবির বিন আনোয়ার রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়েও বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই প্যানেলে সভাপতি হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক সিনিয়র সচিব (জনপ্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র), পরবর্তীতে আওয়ামী সরকার আস্থাভাজন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান নিজেই। নির্বাচনে এই প্যানেল থেকে ড. মোজাম্মেল হক খান সভাপতি নির্বাচিত হন। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জনাব মো. আবুল কালাম আজাদ (সাবেক মুখ্য সচিব) সমর্থিত প্যানেল থেকে সহ সভাপতি, প্রধান জাতীয় কমিশনার এবং কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন।
    কাউন্সিল সভাটি ২ জুন ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। সভা চলাকালীন, যখন নির্বাচন শুরু হয়ে ৩৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, তখনই তখনকার সভাপতি জনাব আবুল কালাম আজাদ, এমপি সভা মুলতবী ঘোষণা করেন; যা সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভুত। মুলতবী সভা ২৪ ঘন্টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান থাকলেও তা অনুসরণ না করে দীর্ঘ ১ মাস ৪ দিন পরে ৬ জুলাই ২০২৪ তারিখে মুলতবী সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে ড. মোজাম্মেল হক খান আমলাতন্ত্রের সকল প্রকার ক্ষমতার অপ্রয়োগ (ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং) করে এবং জনাব কবির বিন আনোয়ার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভোটারদের নানাভাবে প্রভাবিত করেন। এই প্যানেল থেকে একমাত্র সভাপতি পদে বিজয়ী হন ড. মোজাম্মেল হক খান।
    নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দুটি প্যানেলের নেতৃত্বদানকারী ড. মোজাম্মেলল হক খান ও আবুল কালাম আজাদ ১/১১ এর পর স্কাউটের নির্বাচিত কমিটিকে রাষ্ট্রপতিকে প্রভাবিত করে বাতিল করে এই ১৭ বছর যাবৎ বাংলাদেশ স্কাউটসে একটি আওয়ামী দৃর্বৃত্যায়ন প্রতিষ্ঠা করেন।
    উল্লেখ্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী সরকারের পতন হলে নির্বাচিত প্রধান জাতীয় কমিশনার শাহ মো. কামাল প্রেফতার হন। সদ্য বিদায়ী সভাপতি আত্মগোপনে চলে যান। নির্বাচিত সভাপতি দুর্নীতিগ্রস্থদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সমালোচিত হন ও হচ্ছেন। ফলে দ্রশের ব্রহত্তম এই শিশু-কিশোর-যুব সংগঠনটি বর্তমানে নেতৃত্বহীন অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বাংলাদেশ স্কাউটসের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকে একটি “অন্তবর্তকালীন জাতীয় পরিষদ” গঠন সময়ের দাবী, যে পরিষদ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গঠনতন্ত্রের সংস্কার সাধন করে নির্বচনের ব্যবস্থা করবে। উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন, বিশ্ব স্কাউট কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম বীর প্রতীক; রয়েছেন এশিয়া প্যাসিফিক স্কাউট কিমিটির সাবেক সভাপতি, সাবেক প্রধান নির্বচন কমিশনার আবু হেনা (CSP Officer); রয়েছেন এশিয়া প্যাসিফিক স্কাউট কিমিটির সাবেক সদস্য মুহ. ফজলুর রহমান (CSP Officer); সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব শাহ মো. ফরিদ (CSP Officer) প্রেসিডেন্ট রোভার স্কাউট ও সাবেক যুগ্ম সচিব (BCS Officer) রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক মূখ্য সচিব আব্দুল করিম, মো. মোমতাজুল ইসলাম প্রমুখ। এক্ষেত্রে, নবগঠিত যারা দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে স্কাউটিংয়ের সর্বোচ্চ পদ লিডার ট্রনারের (Leader Trainer) দায়িত্ব প্রাপ্ত হন, সকল পর্যায়ের কমিটিতে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
    ব্যাডেন পাওয়েল প্রবর্তিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে স্কাউটিং চালু রাখতে হলে স্কাউটিংয়ের সকল পর্যায় থেকে পদাধিকারবলে পদ দখল করার প্রক্রিয়া/পদ্ধতি রহিত/বন্ধ করতে হবে। সকল পর্যায়ে স্কাউটিংয়ের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে, প্রয়োজনীয় স্থানে নিয়োগ দিতে হবে। একজন প্রধান জাতীয় কমিশনারের হাতে ৬০ জন জাতীয় কমিশনার ও জাতীয় উপ কমিশনার নিয়োগের প্রথা বাতিল করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে টেকনোক্র্যাট হিসেবে নিয়োগ করার বিধান থাকবে বটে, তবে কোন পর্যায়ে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারী হবেন না।
    বাংলাদেশ স্কউটসের জাতীয় নির্ভাহী কমিটি না থাকায়, বর্তমান অচলাবস্থা কাটানোর জন্য বাংলাদেশ স্কাউটসের “গঠন ও নিয়ম”-এর ১৭ নম্বর ধারা বলে রাষ্ট্রপতি প্রস্তাবিত ““অন্তবর্তকালীন জাতীয় পরিষদ” গঠন করতে পারেন। তিনি কোন পন্থায় বা কীভাবে কী করবেন তা দেশের সংবিধানের ৪৮(৩) নম্বর ধারয় সুস্পষ্ট করে দেয়া আছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চীফ স্কাউটের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে রইলাম আমরা মাঠ পর্যায়ের স্কাউটটারগণ।
    এখানে আমার প্রস্তাব হচ্ছে, বাংলাদেশ স্কাউটসের উপদেষ্টা পরিষদের সর্বজন গ্রহনযোগ্য ও দলনিরপেক্ষ সদস্য হলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও রাষ্ট্রদূত জনাব মোহাম্মদ আবু হেনা এবং সাবেক সচিব মুহঃ ফজলুর রহমান-এর নেতৃত্বে গঠিত হোক বাংলাদেশ স্কাউটসের “অন্তবর্তীকালীন জাতীয় পরিষদ”, যারা স্কাউট সংগঠণের নিম্নপর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়-সর্বত্র সংস্কার কার্য পরিচালনা করবেন।
আরও দেখুন

এ বিষয়ের আরও সংবাদ

Close