স্বাস্থ্য

উহান থেকে শিক্ষা

উহানে আমি ১০ দিন পুরো লকডাউন এ কিভাবে বাচ্চা নিয়ে ভালো ছিলাম বা দেশে সরকারিভাবে ইভাকুয়েশন ফ্লাইটে এসে ১৫ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইনে কিভাবে সুস্থ্য ছিলাম এ নিয়ে অনেকেই আমাকে ইনবক্স করছেন।তাই ভাবলাম সবাইকে একবারে বলি।

#**কি করেছি উহান এর লকডাউন এর দিনগুলোতে?

১। নামাজ, কোরআন পড়ে আর সুরা আসতাগফির করে আল্লাহর কাছে এই বিপদের মুক্তি চেয়েছি।

২। উহান লকডাউন হবার পর থেকে একবারও কারো সাথে দেখা হয়নি এবং জানুয়ারি মাস পুরো সময় একবারের জন্য বাসার বাইরে যাইনি আমি আর বাচ্চা।
শুধুমাত্র মেয়ের বাবা বাইরে গিয়েছেন সপ্তাহে একবার বাজার করতে।

৩।প্রতিবার যে বাসার বাইরে গিয়েছে সে আসার আগে বাইরে বসেই কিছু ড্রেস খুলে বাসায় ঢুকে সরাসরি গোছল করেছে।ততটা সময় আমি বা মেয়ে আলাদা রুম এ থেকেছি।মেয়ের বাবা যেহেতু বাইরে যেত তাই মেয়েকে কম টাচ করেছে বা রুমে এসেছে।

৪। প্রচুর পরিমানে কুসুম গরম পানি,আদা গরম মস্লার চা, ভিটামিন সি,লেবু গরম পানি, স্যুপ বেশি খেয়েছি সবাই।
মেয়েকে প্রতিদিন তার পুষ্টিকর খাবার দিতে চেষ্টা করেছি।

৫। দিনে যতবার মনে হয়েছে এমন কিছু ধরেছি যাতে জীবাণু থাকতে পারে ততবার হাত মুখ ধুয়ে নিয়েছি।বার বার হাত ধুলে উলটা ঠাণ্ডা লাগতে পারে।

৬। হাচি কাশি বা সর্দি ফেলতে সবসময় টিস্যুব্যাবহার করেছি।তারপর সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়েছি।

৭। বাসার বাহিরে গেলে মাস্ক ব্যাবহার করা মাস্ট।

৮। মনকে ভালো রাখার জন্য মাঝে মাঝে মা বাবার সাথে কথা বলেছি আর মেয়ের পুরাতন ভিডিও দেখেছি বা প্রিয় গান শুনেছি।

৯। মাইনাস তাপমাত্রাতেও প্রতিদিন গোসল করে পরিচ্ছন্ন থেকেছি, ৫ বার অজু করেছি।তবে মেয়েকে ২/৩দিন পর গোছল করিয়েছি যাতে কোনভাবেই ঠাণ্ডাজনিত কারনে হস্পিটাল না যেতে হয়।

১০।বাইরে থেকে কিনে আনা ফল,সবজি,ডিম এমন কি কৌটার কিছু আনলেও সাবান পানি(লিকুইড) দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিয়েছি।

১১।স্বাভাবিক বাতাস আসার জন্য দিনে ৩ঘন্টা জানালা খোলা রেখে বাকি সময় বন্ধ রেখেছি।

১২।মাছ মাংস কম খেয়েছি তবে যা খেয়েছি অবশ্যই অনেক বেশি সিদ্ধ করে নিয়েছি।

১৩।মেয়ের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি যাতে সে হঠাত করে আটকে থেকে মন খারাপ না করে।তাকে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ কাজ এ ব্যস্ত রেখেছি।যদিওবা মোবাইল বা ল্যাপটপ এ সে কার্টুন দেখতে পছন্দ করেনা তবুও দিয়েছে কিছুসময়।

১৪।বাসা ক্লিন রেখেছি সাথে সাথে বাইরে থেকে এসে চাবি, বাসার লক,কলিং বেল হ্যান্ড সেনিটাইজার দিয়ে ক্লিন করেছি।

১৫।প্রতিদিন বাসার সবাই শরীরের তাপমাত্রা চেক করেছি থার্মোমিটার দিয়ে।

১৬।যেহেতু চায়নাতে ম্যাক্সিমাম লেনদেন অনলাইন এ হয় তাই টাকা হাতে ব্যবহার করিনি।আর বাজারে হ্যান্ড গ্লভস পড়া খুব জরুরি।

১৭।পরিবার কে সর্বোচ্চ সময় দেয়ার এর চেয়ে ভালো আর কিছুই নাই।মেয়ে আমি হাজার গল্প করেছি।রান্না করেছি।যদিওবা অনেক বেশি মানসিকভাবে ঠিক থাকতে এগুলো অনেক উপকারী।কারন মন খারাপ হলে শরীর দ্রুত খারাপ হয়।
সত্যি জীবন সুন্দর ♥♥

ইসরাত জাহান লিজা
পিএইচডি গবেষক,
চায়না ইউনিভার্সিটি অফ জিওসাইন্সেস,
উহান,চায়না

আরও দেখুন
Close