মানব জীবন। নিজের আনন্দ সবার মধ্যে বিলিয়ে দেয়া- কোন বিনিময় ছাড়াই। অথচ নিজের পিতা/চাচা মিলে পাঁচ বছরের মায়াবী বালককে হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে কারণ প্রতি পক্ষের ফাসানোর জন্য। এদের শাস্তি প্রকাশ্যে, তাৎক্ষণিকভাবে গুলি/ফাসিতে ঝোলানো।
মানব শিশু জন্মায় মা/বাবার কোলে। শিশুর ভবিষ্যৎ মানবীয় গঠন হয় বাবা/মায়ের সার্বিক ভালবাসার বন্ধনে। তার গুরুত্ব অপরিসীম।
শিক্ষা/বিদ্যা আমরা অর্জন করি বাবা/ মায়ের আশ্রয়ে থেকে। বনের পশু পাখির মত উড়ে যেয়ে নয়। এখনকার বাবা/মা’রা দুটি/একটি সন্তানের মধ্যে নিজের প্রাপ্তি পেতে প্রাণপন চেষ্টা করেন। কিন্তু সার্বিক কল্যাণময় মানবিক শিক্ষা প্রয়োজন। জ্ঞান অর্জন করে স্বশিক্ষিত হয়ে স্বনির্ভর হওয়া স্বপ্নই আসল। সাথে জীবিকার সংযোগসূত্র আছে।
বর্তমানে লেখা-পড়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কঠিন। তাই সবাই ফাক ফোকরে অতি সহজে সনদপত্র জোগাড়ে তৎপর। তাতে বাবা/মা/শিক্ষককুল জড়িত। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ ২০১৫ এর ঘটনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে ৩জন মেয়ে আমার নীচের তলা ভাড়া নেয়। পূর্ণি চাকমাও তার মধ্যে ছিলেন। ওর বোন ধামরাই এর এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তখন শীত কাল পিএসসি পরীক্ষার সময়। আমার বাসার মুল ফটক রাত ১১টায় বন্ধ করি। পূর্ণি হটাৎ এক রাতে ১টায় এসে বলেন, মাম গেট খুলে দিন। আমার বোন ছিল এখানে। বাসা থেকে বেরোবে। আমি বেরিয়ে ওর বোনকে জানতে চাইলাম কেন?
ওর বোনের স্বামীও এ.এস.পি অনেকবার জুরাজুরি পর বললো পিএসসি এর পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে। তাই টাকা নিয়ে জোগাড়ে যাবেন। কেন করতে হবে? বললেন, নাহলে তার স্কুলে ছাত্র/ছাত্রী কমে যাবে। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। পিএসসি থেকে নকল তাহলে কি দরকার? কেন দরকার? আমরা তো ক্লাশ থ্রি ঐচ্ছিক ইংরেজি ভাষা শিখেছি। কিন্তু বাংলা মাধ্যমে সবকিছু আয়ত্ব করেছি। খোদ ইসরাইল সারা পৃৃথিবীতে ব্যবসা চালাচ্ছে। সস্ত্রাস করছে। তাদের দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ভাষা হিব্রæ।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন ভাষা শিখতে হয়। ঠিক আছে। কোর্স করবে। পিএইচ.ডি করে গবেষক হতে গেলে বিশেষজ্ঞ হতে হলে দরকার। শুধুমাত্র জীবিকার জন্য কি আমরা বিদ্যা গ্রহণ করি । সে বিদ্যা জীবনে ব্যবহার করি জ্ঞান লাভ ও প্রয়োজনে।
প্রতিবন্ধি শিশুদের স্পেশাল নিড্স প্রয়োজন। সেজন্য সবার সরকারী/বেসরকারী/এনজিও গুলির আন্তরিক ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা করা প্রয়োজন।
তবে প্রত্যেক শিশুর কোমল মন যখন পঠন-পাঠনের চাপে বিভ্রান্ত। নকল এর চাপে ব্যাহত। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি “ ইদুর দৌড়ে ঠেলে দিয়ে, কিছু পাইয়ে দেয়ার সে যন্ত্রবৎ শিক্ষা” শিক্ষা কর্মযজ্ঞে পরিবার এক নম্বর পাঠশালা। কিন্তু শিক্ষাগণ বাবা+মা+ গাইড = শিক্ষক। তাদের একান্ত নিবেদিত ভুমিকায় শিশুর মানবিক/জাগতিক বৈষয়িক/আত্মিক জ্ঞান লাভে ইচ্ছা উৎসাহ ও উদ্দীপনা কে উজ্জল আলোয় পরিণত হয়। আধুনিক সর্বশিক্ষার যুগে তাই একজন মানুষ অত্যন্ত অমানুষ। অমানবিক কাজ করছে। তাই সব শিশুর অন্তরে ভবিষ্যৎ পিতা/মাতা ঘুমিয়ে থাকা রূপ ভয়ংকর আত্মঘাতী বির্নিমান হচ্ছে। তাই শিক্ষা যাইহোক। বর্তমানে ভার্চুয়াল আগ্রাসনে, ধনী, গরীব, মধ্যবিত্ত এককাতারে এসে এক মুহুর্তে সবকিছু প্রাপ্তি সাথে অশিক্ষা কুশিক্ষা প্রকট হচ্ছে। সুশিক্ষা কোন ভাবেই আয়ত্ব হচ্ছে না। সামাজিক আদর্শ হিসাবে সামনে আদর্শ মানব আজ খুজে পাওয়া কঠিন।
তাই শিক্ষার এই আবহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাহত। মা প্রেমিকের জন্য সন্তান হত্যা করছে। পিতা/চাচা প্রতিপক্ষকে ফাসাতে নিজ সন্তান হত্যা করে বুকে ছুরি গেথে রাখছে। শিশুর মনস্তত্ত¡ এর এই বড় ধ্বংষ ঠেকানো প্রয়োজন। আজকের শিশু আগামীদিনের বাবা/মা। অবহেলিত/অতিচাপ আজ বড্ড অসহায় করছে সমাজ ও মানবিক মূল্যবোধকে। শুধু আইন দিয়ে এই শিশু শিক্ষা ও শিশু কল্যাণ প্রকল্প সফল হবে না। গোড়ায় হওয়া গলদ ঠেকাতে হবে। তেতুল গাছে আম ফলবে না। ভাল সুমিষ্ট কলা/ আমের জন্য জমির প্রস্তুতি, সময় ও ভাল বীজ প্রয়োজন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আজ বড্ড প্রয়োজন। প্রকৃতি পাঠ, বিশ্ব পরিচয় অবশ্যই সহজভাবে মনে রাখার ভঙ্গিতে, পরিশীলিত, অনুভব করার শিক্ষা আজ শিশুর শিক্ষা শিশু স্বাস্থে প্রয়োজন।
বন্ধু হোন, বন্ধু পাতান সন্তানের সাথে। ছোট থেকে প্রতিদিন ১ ঘন্টা সময় তার নিবিড় সাহায্যে কাটান। কারণ বন্ধুত্ব নিঃসন্দেহে একটা সুন্দর সম্পর্ক। ছোট থেকে বড় হওয়ার প্রতিটা ধাপে। আমাদের মনের কথা ভাগ করে নেয়ার জন্য পাশে চাই ঘনিষ্ট বন্ধু। এই বন্ধুদের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানা দিক আছে। খারাপ প্রভাব এড়ানো দরকার। কারণ জীবনের কোন পর্যায়ে কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ, সেটা সব সময় অনুভব করে চলতে শিশু বয়সেই ভিত তৈরি হয়। অনেক সময় বন্ধুদের সব কিছুই ভালো মনে হয়। আবার এর মাধ্যমে ভিতরে তৈরি হয় কম্পিউটিশনের মনোভাব। এর সবটাই খারাপ/ভাল নিরুপন করার মানদন্ড একটু একটু করে সৃষ্টি হয়। ক্লাসের বন্ধুরা গল্পের বই পড়েছে তাই ওকে এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করার মনোভাব থাকবে। তা কম্পিউটিশন নয়। নুতন কিছু শিখে বন্ধুদের কাছে সম্মান পাওয়া। বেস্ট বন্ধুর কাছে লুডু/দাবা খেলা শেখা। ইতিবাচক প্রভাব দরকার। তাই মা/বাবা বড় গাইড। হেলদি কম্পিউটিশন, ক্রিয়েটিভিটি, সিনসিয়ারিটি এর মতো পজিটিভ ইনফ্লুয়েন্স ও সমবয়সী বন্ধুদের থেকে শিখে নেয় ছোটরা। কিন্তু বন্ধু অন্তপ্রাণ শিশুটি বন্ধুদের থেকে খারাপ কিছু শিখলে; বাবা/মা বন্ধু হয়ে তৈরি করতে হবে। ছোট থেকে সন্তানের নিজস্ব একটা পরিচিত গড়ে তুলতে না করে নিজের মত বেড়ে উঠতে সহায়তা করুন। ভাল কাজের প্রশংসা। আর খারাপ কিছু থাকলে তা থেকে একটু একটু বেরোনোর পথ শিখিয়ে দিন।
তারপর কিশোর/কিশোরী বয়সটাই উড়ে বেড়ানো মন। মানসিক টানাপোড়েন প্রতি মুহুর্তে। জটিল ও কঠিন মুহুর্তে এখনকার বয়লার সদৃশ সন্তানরা সহজেই আত্মহননে এগোয়। অরিত্রী ভিখারুন্নেসার মেয়েটির কথা ধরুন। বাবার অপমানে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন পদ্ধতি তার ছিল না। অধিকাংশ স্বচ্ছল পরিবারের দুটি/একটি সন্তান। সন্তানদের সমস্তরকম পার্থিব চাহিদা বাবা/মা তাৎক্ষণিকভাবে মেটান। শুধু দেননা তাদের দামী সময়। অন্তরঙ্গ ভালবাসা আবেগ নির্ভর সময়।
বাবা/মায়ের তৈরি সাজানো গোছানো পৃথিবীর। যা বাস্তবে পৃথিবীর একেবারে আলাদা। সব পাওয়া কিশোর কিশোরী বাইরের কঠিন বাস্তবে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টায় হটাৎ ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতা জনিত নানা কষ্ট প্রতি মুহুর্তে আঘাত মনকে। বাস্তবের সাথে সংঘাত হয়। তা বুঝবার ক্ষমতা শিশুমনে প্রতিরোধে শক্ত ভিত না থাকায় এরকম হয়। অতি আধুনিক বাবা/মা/শিক্ষক যিনি বাবা/মা এবং তার চেয়ে বেশি। প্রধান সমস্যা মনের। মনের নাগাল থেকে অভিভাবকদের সময় দিয়ে বুঝতে হবে। তাদের উপর জোর খাটানো চলবে না। কষ্ট সহিষ্ণু হওয়া। সন্তানদের মনকে পড়ে নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষকগণ ও সমাজ কাজ করবেন। অতিরিক্ত চাহিদাপূরণ নয়। প্রকৃতির মত শান্ত ও সময় নির্ভর ধৈর্য্যশীল হওয়ার বাস্তব/স্বাভাবিক বিষয়ে পরিচয় অভ্যস্ত করার চেষ্টা চালাতে হবে।
* প্রাবন্ধিক ও লেখক, উপ-রেজিস্ট্রারার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।