প্রারম্ভ
যাত্রা হোক প্রতিদিনের পারিবারিক বিনোদন- এই চেতনায় শাণিত হয়েই নগর যাত্রাদল জয়যাত্রা এবং যাত্রাশিল্পী-যাত্রাকুশিলব- অধিকারী-পালাকারদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রা ফেডারেশন এই প্রথম যাত্রাশিল্পের সাথে যুক্ত সকলের অধিকার সংরক্ষনের জন্য পোস্টার প্রকাশ করে।যা যাত্রাশিল্পে এক অনন্য ঘটনা। সেই পোস্টারের দাবীসমূহ নিয়েই
আজকের লেখনি।
জাতীয় যাত্রা একাডেমী
পাশের দেশ ভারতে যাত্রা একাডেমী আছে। যাত্রার উৎপত্তি এই উপমহাদেশে। যাত্রা থেকেই সকল শিল্পের উৎপত্তি। অর্থাৎ যাত্রা সকল শিল্পের মা। যাত্রা শিল্পীদের সকল সমস্যাসহ যাত্রা কুুশিলব-যাত্রাদলের অধিকারী এবং যাত্রা দর্শকদেরও সমস্যার সমাধান সহয। পূর্ণাঙ্গ যাত্রা একাডেমী জরুরী। যেখানে যাত্রাশিল্পের সাথে যুক্ত তারা এসে যেনো অবস্থান করতে পারেন।
জাতীয় যাত্রা একাডেমী না হওয়া পযর্ন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে যাত্রা বিভাগ খোলা যেতে পারে যেহেতু শিল্পকলা একাডেমী যাত্রাদলের- তালিকাভুক্ত সকলের-যাত্রা মঞ্চায়নের- পালাকার- শিল্পকলায় তালিকাভুক্ত করেছে তিনটি যাত্রাদলকে- সেইহেতু।
বিশেষত: রাষ্ট্রিয় ভাবে যাত্রাশিল্পের যে কাউকেই সুবিধা পেতে শিল্পকলা একাডেমীর সুপারিশ কার্যকর। গত ২৪ জুন ২০১৯ স্মৃতি সত্ত্বা ভবিষ্যৎ শীর্ষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন “তিন চার বছর ধরে নীতিমালায় পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। এবার আলোকচিত্র- আবৃত্তি- লোকসংস্কৃতি বিভাগ সন্নিবেশ করা হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী উপবিভাগ এবার বিভাগ করার কথা। হলে যাত্রাশিল্পের অপরাধ কোথায়? যে যাত্রার জন্য শিল্পকলা এত কিছু করছে তারপরও কী যাত্রা বিভাগ হবেনা।
তবে পৃথক যাত্রা একাডেমী বিশেষ জরুরী।
জাতীয় যাত্রামঞ্চ
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিভাগেই জাতীয় মঞ্চ আছে। নেই জাতীয় যাত্রামঞ্চ। পৃথক যাত্রা একাডেমী হলে জাতীয় যাত্রামঞ্চ সেখানে হবে। না হওয়া পর্যন্তও জাতীয় যাত্রামঞ্চ জরুরী। শিল্পকলা একাডেমীতেই হতে পারে। নন্দনমঞ্চ বলে যেটা আছে সেটা যাত্রা মঞ্চায়ন অংশটি আরো বড় হওয়া দরকার। পরিবেশ এবং যাত্রা- দুই চিন্তাতেই ঐ জলমঞ্চ বা নন্দনমঞ্চ জাতীয় যাত্রামঞ্চ হতে পারে। যেহেতু শিল্পকলা একাডেমী যাত্রাশিল্পের সাথেও যুক্ত তাই সেখানে জাতীয় যাত্রামঞ্চ থাকতেই পারে। পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ে যাত্রামঞ্চ।
যাত্রাগান ও সান্ধ্যকালীন যাত্রা
নানা ছলছুতায় এবং আইনের বাধা দেখিয়ে যাত্রাগানের এবং সান্ধ্যকালীন যাত্রার অনুমতি নিতে হয়। নাটক যদি সান্ধ্যকালীন বা অন্যান্য চলচ্চিত্র দিন- রাত প্রদর্শনী হতে পারে-যাত্রার অপরাধ কোথায়? পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে এই অজুহাতে যাত্রাগান এবং সান্ধ্যকালীন যাত্রা থেকে জাতি বঞ্চিত। যুগের প্রয়োজনেই রাত জেগে যাত্রা মঞ্চায়ন কঠিন। সেই দিক থেকে অবশ্য যাত্রাগানের অবাধ অনুমতি যেমন জরুরী। তেমনি সান্ধ্যাকালীন যাত্রাও জরুরী।
অশ্লীলতামুক্ত যাত্রা
অশ্লীলতা যে কোন শিল্পের জন্য ধংসকারী। বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্র যে অবস্থায় ভাবতেই পারি নাই। যাত্রাশিল্পের ধংসের কারণ অশ্লীলতা। এজন্য দায়ী যারা তারা ক্ষমার অযোগ্য। দেশের আইন মেনেই তাদের বিচার হওয়া জরুরী। মালী অসুস্থ হলে বাগানের পরিচর্যা হয়না। ফুল ফোটেনা। যাত্রার দিকপালদের মধ্যে যারা দায়ী তাদের জন্যই যাত্রার এই হাল। সাম্প্রতিক শিল্পকলার আয়োজনে এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় যাত্রা মঞ্চায়ন হলো- কোনো অশ্লীলতা ছিলোনা। শিল্পে- সাহিত্যে-সংস্কৃতির সকল ক্ষেত্রেই শিশু কিশোর পরিবেশনা হয়েছে-হচ্ছে অবশ্যই আনন্দময়। কিন্তু শিশু-কিশোর উপযোগী যাত্রা হয়নি হচ্ছেনা। বিশিষ্ট লেখক মঈন আহমেদ যাত্রা-নাটক নিয়ে লিখছেন। তাঁকে উল্লেখিত প্রস্তাবনা দিলে তিনি তৎকালীন মহাপরিচালক কামাল লোহানীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ইতিবাচক সাড়া পেয়ে সেই বিষয়ে বিশ্লেষণসহ শিশু কিশোর উপযোগী যাত্রার পান্ডুলিপি জমা দেন। তখন সেই পান্ডুলিপি গবেষণা বিভাগে জমা হয়। তারপর আর কোন অগ্রগতি হয়নি। এই বিষয়টি নিয়ে যাত্রা অনুরাগী বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথেও কথা হয়েছে। সকলেই ভালো বলেছেন। হওয়া উচিৎ বলে মত দিয়েছেন। কিন্তু…। কোন পালাকার এই নিয়ে যদি ভাবেন তা হলে আরো উপকার পাবো।এই জন্য যাত্রা বিষয়ক প্রতিটি কর্মশালায় শিশু কিশোরদের অন্তর্ভুক্তি সুনিশ্চিত আবশ্যক।
পরিশেষ
পরিশেষে বলতে চাই যে জাতীয় যাত্রা একাডেমীর কোন বিকল্প নেই। জাতীয় যাত্রামঞ্চ- যাত্রাগানের অবাধ অনুমতি- সান্ধ্যকালীন যাত্রা- অশ্লীলতামুক্ত যাত্রা- শিশু কিশোর উপযোগী যাত্রা সকল সমস্যার সমাধান এখানেই নিহিত। শুধু তাই নয় যাত্রাশিল্পী- যাত্রা কুশিলব-পালাকার- অধিকারী- যাত্রাদর্শক –তাদের একতা ও সমতা ভিত্তিক অবস্থান নির্ণয়কও জাতীয় যাত্রা একাডেমী। বিদেশগামী সাংস্কৃতিক দলে যাত্রাশিল্পের সাথে সংশ্লীষ্ট-এদের অন্তর্ভুক্তিও সুনিশ্চিতকরণ।এই বিষয়টিও জাতীয় যাত্রা একাডেমীর।
জয়তু জাতীয় যাত্রা একাডেমী। জয়তু জাতীয় যাত্রামঞ্চ। জয়তু যাত্রা।
* টিমুনী খান রীনো
কবি-ছড়াকার-সংগঠক- সঞ্চালক-সাংবাদিক