জাতীয়

শ্রমিক দিবস :তারকাদের ভাবনা

জিয়াউদ্দীন চৌধুরী (জেড সেলিম)

আজ পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে সেই রক্তাক্ত ঘটনার পর অনেক বছর পেরিয়ে গেলেও সারা বিশ্বের শ্রমিকদের শতভাগ ন্যায্য পারিশ্রমিক আদৌ দেয়া হচ্ছে না। যার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন পর্যায়ে শ্রমিকদের আন্দোলন চলছে। আবার শ্রম আইন উপেক্ষা করে শিশু শ্রমিকদের ব্যবহার সর্বত্রই লক্ষণীয়। সঠিক পারিশ্রমিক তো দূরের কথা।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করছেন। এ দিনটির মাহাত্ম, শ্রমিকদের অধিকার, সুবিধা, বঞ্চনাসহ নানা বিষয়ে তারকাদের মন্তব্য তুলে ধরেছেন জিয়াউদ্দীন চৌধুরী (জেড সেলিম)।

তানভীন সুইটি(অভিনেএী,মডেল):আমি নিজেও একজন শ্রমিক। আমাদের ধর্মে আছে, শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই যেন তার পারিশ্রমিক দিয়ে দেয়া হয়। এখনো আমাদের দেশে শ্রমিকরা তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।আর এর জন্য দায়ী হচ্ছে, আমাদের উন্নত মানসিকতার অভাব।শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজ করবে, এর মধ্যে এক ঘণ্টা বিশ্রাম রয়েছে। কিন্তু এই ৮ঘণ্টা কাজ করেও তারা মৌলিক চাহিদা পূরণের আশায় ওভারটাইম করছে।অর্থাৎ সস্তা শ্রম ব্যবস্থার কারণেই তাদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।আবার অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরা যথাযথভাবে তাদের পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সবার উন্নত মানসিকতার পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে। তবে আমি আশা রাখি, একদিন শ্রমজীবী মানুষের জয়জয়কার আসবে।
বুল বুল টুম্পা(মডেল কোরিওগ্রফার): ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বহু শ্রমিককে প্রাণ দিতে হয়েছিল। সেখান থেকে বিশ্বের সকল দেশসহ বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক মে দিবস বা শ্রমিক দিবস পালন হয়ে থাকে। আমরা বলতে চাই, শুধু ঐ দিন সভা, সমাবেশ, সেমিনার, মানববন্ধন, কর্মসূচী উদযাপন করেই দিনকে অতিবাহিত করলেই চলবে না। শ্রমিকের সত্যিকার ন্যায্য মজুরি ও কাজের সুযোগ সুবিধাকেও বাস্তবে রূপদান করতে হবে।
শাবনাজ ছাদিয়া ঈমী (মডেল কোরিওগ্রফার): দৈনিক ৮ ঘন্টার বিরুদ্ধে আমেরিকার শিকাগোর হে’ মার্কেট থেকে সূঁই শ্রমিকদের রক্তান্ত আন্দোলনের মাধ্যমে যে মে’ দিবসের সূচনা, কালক্রমে তা বিশ্বব্যাপি শ্রমিক আন্দোলনের স্মরণীয় ও বরণীয় দিন হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আমাদের দেশের সর্বত্র মহান মে দিবসের প্রকৃত তাত্পর্য ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন যথাযথভাবে ঘটুক; আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের সুফল সবারক্ষেত্রে সমান ভাবে প্রযোজ্য হউক, এটাই এবারের মে দিবসে আমার অঙ্গীকার।
এডলফখান(মডেল কোরিওগ্রফার): আমি প্রতি বছর দিনটি পালন করে থাকি।বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ। এই জনসংখ্যাকে যদি আমরা জনশক্তিতে পরিণত করতে পারি, সেটিই হবে আমাদের গর্ব।আর একটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে কাজের খুব বেশি ক্ষেত্র নেই।এ জন্য তারা বিভিন্ন দেশে গিয়ে রোদ-বৃষ্টিতে পুড়ে জীবিকা নির্বাহ করছে।শুধু জীবিকা নির্বাহ করছে, তা কিন্তু না।তাদের ঘামের টাকা আমাদের অর্থনীতিতে একটা বিশাল অবদান রাখছে।এ জন্য তাদের প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।আর একটা কথা না বললেই নয়, আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এই শ্রমিকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাশ হয়ে ফিরে আসে।এটা খুবই বেদনাদায়ক।
তাজ তানিয়া (মডেল ,অভিনেএী)আজ মহান মে দিবস। পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশে পহেলা মে জাতীয় ছুটির দিন। আরও অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়।১৮৮৬ সালে আমোরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয়।সেদিন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। এ অপরাধে অনেক শ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছিল। এক কথায় অনেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও শ্রমিকদের জীবনের বিনিময়ে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মক্ষণ এবং ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অবশ্য, ওই সময়টাতে সমাজতান্ত্রিক প্রথার আধিক্য ছিল। এখন অবশ্য, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্ব পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য এখন শ্রমিকরা এতটা বৈষ্যম্যের শিকার হচ্ছেন না।পরিশেষে বলব, শ্রমজীবী মানুষের জয় হোক। তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সবাই যেন সোচ্চার থাকেন- এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
শাকিলা জাফর(সঙ্গীত শিল্পী) দেশে শ্রম পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে এটি সত্যি।কিন্তু যাদের পরিশ্রম ও ঘামের বদৌলতে এ উন্নতি সেই নারী শ্রমিকদের কিন্তু উন্নতি হয়নি।আজকে তাদের উন্নতির কথা সকলকে ভাবতে হবে। নারীর শ্রমের মর্যাদা দেয়ার কথা আপন ঘর থেকে শুরু করতে হবে।সেটা যত দ্রুত শুরু করা যাবে নারী বান্ধব করতে পারা যাবে, নারীর উন্নয়ন তথা শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন ততই টেকসই হবে বলে মনে করি।
তামান্না রহমান(নৃত্য শিল্পী):আসলে শ্রমিক সবাই। প্রত্যেকে তার অবস্থানে শ্রমিক। আমিও একজন নৃত্য শ্রমিক। আমার কাছে মনে হয়, শ্রমিক শব্দটাকে অনেকেই অবহেলার চোখে দেখে।নিচু শ্রেণির মানুষ হিসেবে ভাবা শুরু করে। এ জন্য এমন চিন্তার মানসিকতার জন্য আমি খুবই বিরক্ত হই। আমাদের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি এ বিষয়ে তাই বিষদভাবে কিছু বলব না।শুধু এতটুকু বলতে চাই, শ্রমিকরা যেন ন্যায্য পারিশ্রমিক ও সম্মান পায়।
মিনু হক(নৃত্য শিল্পী):হ্যাঁ, দেশে শ্রম পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বিশেষ করে দেশের গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকেরা এখনো তাদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না। এখনো একজন সাধারণ শ্রমিক একটি কারখানায় দীর্ঘ ১২ ঘন্টা থেকে ১৮ ঘন্টা অবধি হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে যে মজুরি পান, তা নিতান্তই কম। শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিকল্পে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১০ হাজার টাকা করা উচিত এবং এইমর্মে একটি শক্তিশালী মজুরি বোর্ড বা কমিশন গঠন করে শ্রমিকদের অন্যান্য ন্যায্য দাবি-দাওয়া মেটানো উচিত বলে আমি মনে করি।
শারমিন লাকী(উপঞ্ছাপিকা):শ্রমের বা শ্রমিকদের কথা উঠলেই গার্মেন্টসের কথা বারবার উচ্চারিত হয়। অথচ গার্মেন্টসের বাইরেও লক্ষ লক্ষ কর্মজীবী লোকজন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অবশ্য এদেশে গার্মেন্টস শিল্প কারখানায় অধিকসংখ্যক লোকজন কর্মরত। কিন্তু বর্তমানে গার্মেন্টসে কর্মচারীদের চেয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানে আরও কম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। তাই শুধু গার্মেন্টস নিয়ে চিন্তা করলে হবে না সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি নজর দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
লায়কত আলী লাকী(মঞ্চঅভিনেতা,শাল্প একাডেমী মহাপরিচালক):দেশে শ্রম পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে;কিন্তু শ্রমিকের কষ্টের তেমন কোনো রকমফের ঘটেনি।বিশেষ করে মহিলা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নত হয়নি।সুতরাং নারী শ্রমিকের উন্নতি ও সম্মান নিশ্চিত করতে হলে গার্মেন্টস শিল্পের পরিবেশ সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে।
মেহেদী ইবাল ইভান(মডেল): মে দিবসের ভাবনাকে আমাদের বাস্তবে রূপদান করা দরকার।আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা নানাভাবে সমস্যায় জর্জড়িত।আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের মালিকদের সজাগ হওয়া দরকার।আমরা দেশের সবকটি গার্মেন্টস শিল্পে স্বচ্ছতা দেখতে চাই।মে দিবসের এই প্রত্যাশা।
অরনব(মডেল):আসন্ন মহান মে দিবস উদযাপিত হবে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে। আমাদের দেশে শ্রম পরিস্থিতির মান-সম্পন্ন হলেও আসল জায়গা এখন পর্যন্ত তেমন উন্নতি হয়নি। বেতন কাঠামো নির্দিষ্ট করা হয়নি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের গার্মেন্টস শিল্প তেমন উন্নতিলাভ করতে পারেনি।
তাছনিম খান(মডেল) আজ থেকে ১৩০ বছর আগে অর্থাত্ ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকের পারিশ্রমিক ও কর্ম সময় নিয়ে আন্দোলন হয়। আমাদের দেশে এখনও সর্বক্ষেত্রে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
রুমানা স্বরণা(অভিনেএী):শ্রমিকের শ্রমের মর্যাদা এখনো পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে শ্রম পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের পরিবেশ নিয়ে নানা কথা রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা মে দিবসের প্রাক্কালে বিষয়টির প্রতি সকল গার্মেন্টস মালিক ও সরকার সুদৃষ্টি দিবেন।
নাজ খান(মডেল):বর্তমান সরকার শিল্পের অগ্রগতির দিকে সবসময় সজাগ। তবে শ্রমিকের বেতন বৈষম্য ও কাজের পরিবেশের দিকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রায়হান সুলতান রীজভী(মডেল):শ্রমের মর্যাদা কোথায়?এখনও তাদের প্রতি আমরা অনেকেই সহনশীল নই! সহমর্মী নই আমরা।বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে এখানে পার্থক্য অনেক।তাই আমরা চাই আসন্ন মে দিবসে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকারের দাবিগুলো পূরণ হোক।

আরও দেখুন

এ বিষয়ের আরও সংবাদ

Close