ব্রেক্সিট ইস্যুতে সর্বশেষ বিকল্প প্রস্তাব এমপিদের দ্বারা প্রত্যাখাত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নো ডিল চুক্তি বার বার প্রত্যাখাত হওয়ার পর বিষয়টি পুরো পার্লামেণ্টের নিয়ন্ত্রণে আসে। বিকল্প হিসেবে ৮টি প্রস্তাব পেশ করেন হাউস অব কমন্সের স্পীকার বারকো। কিন্তু সব প্রস্তাবই একে একে প্রত্যাখাত হয়েছে এমপিদের ভোটে। এমপিদের ভোটে যেমন হেরেছে নো-ডিল ব্রেক্সিটের প্রস্তাব তেমনি হেরেছে ইইউয়ের সাথে সামঞ্জ্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো রক্ষা করে ব্রেক্সিট চুক্তি করা এবং তা পাসের আগে জনরায়ের মাধ্যমে সেটির অনুমোদন নেওয়ার প্রস্তাবও।
এর আগে পার্লামেন্টে বিরোধী দল এবং নিজ দলের এমপিদের কাছে কোণঠাসা হয়ে তাকে সহায়তার শর্তে পদত্যাগে রাজি হন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে। ব্রেক্সিট ইস্যুতে তাকে সমর্থনের শর্তে পদত্যাগ আগেভাগেই পদত্যাগে রাজী হন তিনি। মে বলেন, ব্রেক্সিট চুক্তি পাশ হলে পরবর্তী ধাপ- ইইউ’র সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের সমঝোতায় তিনি থাকবেন না। ২৬ মার্চ, বুধবার নিজ দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে টেরিজা মে এ ঘোষণা দেন। তবে পদত্যাগের কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করেননি তিনি। কনজারভেটিভ পার্টির ব্যাকবেঞ্চারদের সংস্থা ১৯২২ কমিটির সাথে মিটিংয়ে টেরিজা মে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে ব্রেক্সিটের দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন করবেন বলে জানিয়ে দেন। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন সামারে দলীয় কনফারেন্সে নতুন লিডার নির্বাচিত কনজারভেটিভ পার্টি। আর তিনিই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্রেক্সিটের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবেন।
পার্লামেন্ট ব্রেক্সিটের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ায় ভীষণ উদ্বেগে পড়েন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদের সুযোগ হাত ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তাঁদের। সে কারণে মন্দের ভালো হিসেবে প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন তাঁরা।
তবে এই সমর্থনের বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে থেরেসা মে’র পদত্যাগ দাবি করেন তাঁরা। ইইউ’র সঙ্গে সমঝোতার পরবর্তী ধাপ ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের দায়িত্বে ব্রেক্সিটপন্থী কোনো প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চান।
বলা যায়, ব্রেক্সিট ইস্যুতে কঠিন বিপাকে পড়েছে বৃটেন। কোনো ধরণের সুরাহা না হওয়ায় একদিকে যেমন বাড়ছে রাজনৈতিক উত্থাপ ও অস্থিতিশীলতা তেমনি বাড়ছে অর্থনৈতিক সমস্যা। ব্রেক্সিটের আগেই ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বৃটেন। রেফারেণ্ডামে ব্রেক্সিট পক্ষে রায় অর্থাৎ লিভ জয়যুক্ত হওয়ার পর থেকে পাউণ্ড দুর্বল হতে শুরু করে। সেই থেকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে এবং বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপরদিকে, ব্রেক্সিট প্রশ্নে খোদ টোরি সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন এবং আরো অনেকে পদত্যাগের চিন্তাভাবনা করছেন।
অপরদিকে, দ্বিতীয় রেফারেণ্ডামের দাবী ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় মিলিয়ন মানুষ দ্বিতীয় রেফারেণ্ডামের দাবীতে লণ্ডনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিকল্প ৮ ব্রেক্সিট চুক্তির সবগুলোই হেরেছে:
হাউস অব কমন্সে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে আটটি বিকল্প প্রস্তাবের কোনওটিই পাস হয়নি। যেমন হেরেছে নো-ডিল ব্রেক্সিটের প্রস্তাব, তেমন হেরেছে ইইউয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শুল্ক কাঠামো রক্ষা করে ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করা এবং চুক্তি পাসের আগে জনরায়ের মাধ্যমে তার অনুমোদন নেওয়ার প্রস্তাব। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ভোটাভুটির এমন ফলাফলে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী স্টিভেন বার্কলে। তিনি মনে করেন, এই ফলাফলের মাধ্যমে থেরেসা মের প্রচ্চাবিত ব্রেক্সিট চুক্তিটিই যে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য তা প্রমাণিত হয়েছে।
২৭ মার্চ, বুধবার আটটি বিকল্প ব্রেক্সিট প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। এদের মধ্যে ইইউয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত শুল্ক কাঠামোর ভিত্তিতে ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্তের প্রস্তাবটি হারে ২৬৪-২৭২ ভোটে। অন্যদিকে কোনও ব্রেক্সিট চুক্তিকে সংসদে সমর্থন দেওয়ার আগে জনরায় নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপের প্রস্তাবটি হেরে গেছে ২৯৫-২৬৮ ভোটে।
আটটি প্রস্তাবের একটি ছিল চুক্তিহীনভাবে (নো-ডিল) ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন। কিন্তু এই প্রস্তাব হেরেছে ৪০০-১৬০ ভোটে। অন্যদিকে নিক বোলসের উত্থাপিত ইইউয়ের সঙ্গে একক বাজার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব হেরেছে ১৮৮-২৮৩ ভোটে। আবার নো-ডিল ব্রেক্সিট এড়াবার জন্য জোয়ানা চেরির একটি প্রস্তাব হেরেছে ১৮৪-২৯৩ ভোটে। ব্রিটিশ বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রস্তাব করা ব্রেক্সিট চুক্তিটি হেরেছে ২৩৭-৩০৭ ভোটে। আরেকটি প্রস্তাব ছিল, যুক্তরাজ্য ইইউ ত্যাগ করবে, কিন্তু ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এসোসিয়েশন (ইএফটিএ) ও ইউরোপিয়ান ইকোনোমিক এরিয়াতে (ইইএ) যুক্ত হবে। ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির এমপি জর্জ ইউস্টিসের এই প্রস্তাবটি হেরেছে ৬৫-৩৭৭ ভোটে। কন্টিনজেন্ট প্রেফারেনশিয়াল অ্যারেঞ্জমেন্টস শীর্ষক আরেকটি প্রস্তাব হরেছে ১৩৯-৪২২ ভোটে।
বিকল্প প্রস্তাবগুলোর এমন ফলাফলের পর যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী স্টিভেন বার্কলে বলেছেন, এর মাধ্যমে তার পূর্ব-ধারণাই শক্তিশালী হয়েছে। অর্থাৎ থেরেসা মের চুক্তিই সম্ভাব্য চুক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো। তার ভাষ্য, অনেক অপশন বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, সামনে আগানোর কোনোও সহজ রাস্তা নেই।
গত ২৪ মার্চ, সোমবার এক প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সংসদীয় কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়। এরপর থেকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আইনপ্রণেতাদের সংগঠন ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নেতারা নড়েচড়ে বসেন।
ইআরজির প্রধান জ্যাকব রিচ মগ বলেন, তিনি এতদিন প্রধানমন্ত্রীর সম্পাদিত বাজে চুক্তির চাইতে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এখন পার্লামেন্ট যেসব বিকল্পের কথা বলছে সেগুলো ওই চুক্তির চাইতেও বাজে। এ ছাড়া পার্লামেন্ট চুক্তিহীন বিচ্ছেদের সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই মন্দের ভালো হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর চুক্তিতে সমর্থন দিতে রাজি তিনি। তবে সরকারের শরিক দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) চুক্তিতে সমর্থন দিলে তবেই তিনি এটি সমর্থন করবেন।
সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা সমর্থন দিলেই যে কোনো চুক্তি পাশ হয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে ব্রেক্সিট চুক্তি পাশে দুই দফা ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মে। সরকারের শরিক দল ডিইউপিও চুক্তির বিরোধিতায় সরব।
উল্লেখ্য, বিকল্প নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আগেই নিজ দলের সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এই বৈঠকে থেরেসা মে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছিল।
হাউস অব কমন্সের লিডার অ্যান্ড্রিয়া লিডসম বলেন, পর্যাপ্ত সমর্থন নিশ্চিত করা গেলে আবার ব্রেক্সিটচুক্তি নিয়ে তৃতীয় দফা ভোটাভুটির আয়োজন হতে পারে। কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী এই নেতা বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে বিবাদ দূরে রেখে আপাতত বিচ্ছেদ নিশ্চিত করা জরুরী।
দ্বিতীয় রেফারেণ্ডামের দাবিতে লাখ লাখ ব্রেক্সিট বিরোধীর সমাবেশ:
ব্রেক্সিট নিয়ে আরেকটি গণভোটের দাবিতে সমাবেশ হয়েছে যুক্তরাজ্যে। আয়োজকদের দাবি, প্রায় ১০ লাখ ব্রেক্সিট বিরোধী যোগ দিয়েছেন এই সমাবেশে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, লেবার পার্টির সহ-প্রধান সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন। সমাবেশে বামপন্থী কয়েকটি সংগঠন জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিয়েছে। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতায় কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পদত্যাগ করা সাবেক এক টোরি এমপি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে,নতুন ব্রেক্সিট গণভোটকে জনগণের মধ্যে সৃষ্ট বিভক্তি নিরসনের পথ বলে মনে করেছেন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা।
২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের রায় অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টার পর থেকে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য না থাকার কথা ছিল যুক্তরাজ্যের। ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের শর্ত নির্দিষ্ট করে একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্সে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের সমর্থন পায়নি। মে আবার ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদ সদস্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এমন একটি চুক্তি উপস্থাপন করেন গত ১২ মার্চ। কিন্তু তাও পরাজিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয়বারের মতো চুক্তিটি হাউস অব কমন্সে তোলার কথা জানিয়েছিলেন মে। কিন্তু প্রচ্চাবটি পাসে যথেষ্ঠ সংখ্যক এমপির সমর্থ পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
শনিবার (২৩ মার্চ) আরেকটি ব্রেক্সিট গণভোটের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেওয়া লন্ডনের মেয়র সাদিক খান মন্তব্য করেছেন, ব্রেক্সিট বাচ্চবায়নে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বিভ্রান্তিকর পথ কার্যত ব্রেক্সিট বাচ্চবায়নকে ব্যর্থ করেছে। এখন ব্রেক্সিটের বিষয়ে গণভোট আয়োজন ছাড়া কোনও পথ খোলা নেই। ব্রেক্সিটের ূসময় শেষ হয়ে গেছেৃ উল্লেখ করে সাদিক খান আরও বলেছেন, নতুন করে চুক্তির বিষয়ে দেন-দরবার করার জন্য আর কোনও সময় অবশিষ্ট নেই। এবং প্রধানমন্ত্রী তার বিভ্রান্তিকর তৎপরতার মাধ্যমে আমাদের ভালো ইউরোপীয় বন্ধুদের আস্থা নষ্ট করেছেন। যারা উভয় পক্ষের স্বার্থ রক্ষা হয় এমন একটি ভালো চুক্তি পাওয়ার বিষয়ে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন, তারাই এখন ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় ইতি চান।
তিনি মনে করেন, থেরেসা মে দেশের চেয়ে দলকে প্রাধান্য দেওয়ায় যুক্তরাজ্য এখনই মাশুল দেওয়া শুরু করেছে। অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে। বিনিয়োগ গেছে কমে। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই কোনও না কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, তারা যুক্তরাজ্যে উৎপাদন হ্রাস করে দেবে। বর্তমানে যে চুক্তিটি পাস করাতে চান মে তা বাচ্চবায়িত হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যবহু সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকর হয় তাহলে ূজাতীয় দুর্যোগের চেয়ে তা কম কিছু হবে না।
সমাবেশের আয়োজন করা মারিয়েলা ফ্রস্ট্রাপ এবং রিচার্ড বেকন এক পর্যায়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট স্কয়ারে ঘোষণা দেন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তখন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টি থেকে পদত্যাগ করা এবং বর্তমানে নিরপেক্ষ সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করা রাজনীতিবিদ অ্যানা সৌব্রিকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির এই সদস্যসহ আরও কয়েকজন থেরেসা মের ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতা করে দল থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যের বামপন্থী কতগুলো সংগঠন ব্রেক্সিটের বিরোধিতায় একজোট হয়েছে। শনিবারের সমাবেশে অ্যানাদার ‘ইউরোপ ইজ পসিবলের’ ব্যানারে একতাবদ্ধ হওয়া এসব বামপন্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রিন পার্টি, টিএসএসএ ইউনিয়ন, ওপেন লেবার এবং লেবার ফর সোশ্যালিস্ট ইউরোপের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে রয়েছেন লেবার পার্টির কয়েকজন সংসদ সদস্যও। এদের একজন ক্লাইভ লিউইস। তিনি মনে করেন, ব্রেক্সিট বিরোধিতাকে যে শুধু মধ্যপন্থীদের আন্দোলন হিসেবে দেখা হয় তা ঠিক না। বামপন্থীরাও ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে। ব্রেক্সিট একটি ‘টোরি’ প্রজেক্ট, যার মূল লক্ষ্য অর্থনীতিকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া এবং শ্রমিক-অভিবাসী সবার অধিকার ক্ষুণœ করা।
ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির সাবেকসদস্য থেকে শুরু বামপন্থীরাও দ্বিতীয় গণভোটের যে কর্মসূচিতে সরব হয়েছেন, সেখানে দেখা গেছে লেবার পার্টির শীর্স্থানীয় একজন নেতাকেও। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান মনে করে, ব্রিটিশ লেবার পার্টির সহ-প্রধান টম ওয়াটসনের উপস্থিতি, দ্বিতীয় ব্রেক্সিট গণভোটের দাবির প্রতি লেবার পার্টির অবস্থান পষ্ট করবে। র্যা লির পরে সমাবেশে দেওয়া ভাষণে ওয়াটসন বলেছেন, ব্রেক্সিটের বিষয়ে আবার গণভোটের আয়োজন করা উচিত। এই ভোটের মাধ্যমেই জাতি ঐক্যবদ্ধ হবে এবং একসঙ্গে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারবে।
ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের আগেই বৃটেনের বিপুল ক্ষতি:
ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হয়েছে, শেষমেশ তা হয়তো বাতিলও হতে পারে। কিন্তু ব্রেক্সিট ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। ২০১৬ সালের জুন মাসে ব্রিটিশরা ব্রেক্সিট গণভোটে হ্যাঁ ভোট দিলে পাউন্ড নাটকীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে এবং বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতে, ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এই দুই বছরের মধ্যে ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়নে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে এমনটা হতো না বলেই মনে করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গণভোটের পর প্রতি সপ্তাহে দেশটির উৎপাদন কমেছে ১০০ কোটি ডলার এবং সপ্তাহের হিসাবে তা দাঁড়ায় ৬০ লাখ ডলার। এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য সম্পর্কে কাঠামোগত পরিবর্তন আসেনি। তার আগেই ক্ষতির পরিমাণ এমনটা দাঁড়িয়েছে।
ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে পণ্য ও সেবা বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে রাজনীতিবিদেরা বিচ্ছেদের ধরন নিয়ে বিরতিহীন আলোচনা চালিয়েই যাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলো এখনো সহজেই ইইউ কর্মীদের নিয়োগ দিতে পারছে। সরবরাহ ব্যবস্থাও জাতিগত সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে ভবিষ্যৎ নিয়ে। আগামী তিন বছরে বাণিজ্যের ধরন কী দাঁড়াবে, তা পষ্ট না হওয়ায় কোম্পানিগুলো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পারছে না। অনেক বিনিয়োগ স্থবির বা বাতিল হয়ে গেছে। অনেক কোম্পানি আবার সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে কী করণীয় হবে, তার পরিকল্পনা করতে লাখ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছেচ্চব্রেক্সিট বাচ্চবায়নে বিশৃঙ্খলা হলে কী করণীয়।
যুক্তরাজ্যের রাজনীতি এখন বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। এখনো এমন ঝুঁকি আছে যে ক্রান্তিকালীন চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলেছে, পরিস্থিতি সে রকম হলে তার পরিণতি ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের চেয়েও ভয়াবহ হবে।