১২ ভাদ্র ১৪২৫, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার কাব্যলোকের ২৭তম আয়োজন- শীতের কবিতা অনুষ্ঠিত হলো পদ্মা নদী বিধৌত দোহার উপজেলার মকসুদপুরের ঐতিহ্যবাহী সরকারি পদ্মা কলেজে। এদিন সকাল ৮৩০০টায় রাজধানীর শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘর ও কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে থেকে দুটি বাসে করে কাব্যলোকের কবি ও অতিথিদের নিয়ে যাওয়া হয় অনুষ্ঠানস্থলে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন প্রকল্প চালু থাকায় রাস্তার উন্নয়ণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে এগিয়ে চলায় যাত্রাপথ ছিল একটু কন্টকাকীর্ণ, ধুলোর অত্যাচার সইতে হয়েছে সকলকে। নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট পরে কাব্যলোকের বাস পৌঁছে কলেজ প্রাঙ্গনে। সেখানে কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ (কলেজের অনেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্যসহ) আমাদের স্বাগত জানান। অধ্যক্ষের কক্ষে সকলকে চায়ে আপ্যায়ন করা হয়। এরআগে যাত্রা পথে বাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয় সকালের নাশতা পর্ব।
চা পর্ব শেষে শুরু হয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন পর্ব। কলেজের অধ্যক্ষ (আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি-একই বিভাগের ও একই সেকশনের) মোঃ জালাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন কয়েকজন উদ্যোক্তা সদস্য। স্বাগত বক্ত্য রাখেন কাব্যলোক ক্রিয়েটিভস লি.-এর চেয়ারম্যান কবি জেবুননেসা হেলেন। উপস্থিত ছিলেন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, কলেজের শিক্ষকমণ্ডলি, রোভার স্কাউটের সদস্যবৃন্দ।
এ সময়ে কাব্যলোকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আমি কাব্যলোক-২৭ এর সেরা পাঁচ কবির নাম ঘোষণা করি। এবারে যারা সেরা পাঁচ হয়েছেন, তাঁরা হলেন:
সেরা পাঁচ-প্রথম: কবি নিখিল দাস
গাজীপুর, বাংলাদেশ।
সেরা পাঁচ-দ্বিতীয়: কবি পৃথা গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগী
পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।
সেরা পাঁচ-তৃতীয়: কবি শ্যামল সরকার
ঢাকা, বাংলাদেশ।
সেরা পাঁচ-চতুর্থ: কবি আউয়াল আনোয়ার
রাজবাড়ি, বাংলাদেশ।
সেরা পাঁচ-পঞ্চম: কবি মতিউর রহমান মানু
নবাবগঞ্জ, ঢাকা।
এছাড়া প্রথা-মাফিক কাব্যলোক আয়োজনে যাঁরা বিশেষভাবে অনবদ্য অবদান রাখেন তাঁদের জন্য কাব্যলোক প্রতি বাংলা সালের জন্য একজনকে “কাব্যলোক সম্মাননা” প্রদান করে। সেই ধরাবাহিকতায় ১৪২৫ বঙ্গাব্দের জন্য “কাব্যলোক সম্মাননা” প্রদান করা হয় সুহৃদ মোঃ আজিজুল ইসলামকে। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি বিধায়, তাঁর সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ পরবর্তীতে কাব্যলোক অফিস থেকে প্রদান করা হবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে আগত কবি ও অতিথিদের বাসে করে অনতিদূরে পদ্ম নদীর পাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কবি ও অতিথিগণ উপভোগ করেন পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য্য। বলে রাখা ভাল পদ্ম যেমন সৌন্দর্য্যের দিক থেকে মনোরম ও অপরূপ, তেমনি ভরা বর্ষায় প্রচন্ড ভয়াল। একারণেই কবি সুরে সুরে গেয়েছন:
“সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে শুধাই-
বল আমারে তোর কিরে আর
কূল-কিনারা নাই…”
আবার বলেছেন:
“পদ্মরে রে তোর তুফান দেইখা
পরান কাঁপে ডরে
ফেইলা আমায় মারিস না রে
সর্বনাশা ঝড়ে…”
শীত কাল হওয়ায় পদ্মা ছিল শান্ত বালিকার মতো। তাইতো কাব্যলোকের সদস্যরা নিশ্চিন্তে ঘুরেছেন পদ্মার বুকে- নৌকায়।
এখানে তাঁরা আরো একটি বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনে সক্ষম হন। দেশী জাহাজ নির্মান শিল্পের খুটিনাটি বিষয় দেখতে পান। বলে রাখা ভাল, সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে এখানে তৈরী হয় বড় বড় জাহাজ, যা কেবল নদীপথে চলাচল করে না; সাগর বক্ষেও পাড়ি জমায়।
পদ্মা দর্শন ও জুম্মার নামাজের বিরতীর পর আয়োজন করা হয় দুপুরের খাবারের। কলেজের শিক্ষক (রোভার স্কাউট মাস্টার) আমার খুউব চেনা-জানা মানুষ মোল্লা মোঃ ইমদাদুল হক (চাঁন) ভাইয়ের তত্ত্ববধানে খাবারের আয়োজন ছিল এককথায় চমৎকার। একাজে সর্বতো সহয়াতা করেছে কলেজের রোভার স্কাউট সদস্যরা (ছেলে এবং মেয়ে- উভয়ে)। রোভারগণ কবিদের চা পরিবেশন, দুপুরের খাবার পরিবেশন থেকে সকল কাজে দুর্দান্ত সার্ভিস দিয়েছে। তারা প্রমান করেছে রোভারদের মূলমন্ত্র “সেবা”- কিভাবে প্রয়োগ করতে হয়। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই সরকারি পদ্মা কলেজ রোভার স্কাউপ গ্রুপের সদস্যদের ও তাদের নেতা মোল্লা মোঃ ইমদাদুল হক (চাঁন), এ.এল, টি-কে।
দুপুরের আহারের পরে মূল অনুষ্ঠান অর্থাৎ কবিতা পাঠের আয়োজন করা হয়। কাব্যলোকের কবিগণ ছাড়াও কবিতা পাঠ/আবৃত্তি করেন স্থানীয় কবিগণ।
এরপরে আগত অতিথি ও কবি এবং রোভারদের জন্য আয়োজন করা হয় সংক্ষিপ্ত খেলার আয়োজন। মেয়েদের জন্য ছিল চুড়ি পরিধান প্রতিযোগিতা। এটি ডরিচালনা করেন কাব্যলোকের চেয়ারম্যান কবি জেবুনেনসা হেলেন নিজেই। নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক চুড়ি পরিধান করে প্রতিযোগিতায় যারা বিজয়ী হয়, তারা সকলেই কলেজের রোভার স্কাউট, তার হলো:প্রথম: রোভার স্কাউট আশা আক্তার
দ্বিতীয়: রোভার স্কাউট সায়মা আক্তার
তৃতীয়: রোভার স্কাউট আফিয়া আক্তার
পুরুষদের জন্য আয়োজন ছেল বল নিক্ষেপ। এ খেলায় কবিত, অতিথি ছাড়াও রোভারগণ অংশ নেন। মোল্লা মোঃ ইমদাদাউল হক (চাঁন) এটি পরিচালনা করেন। বল নিক্ষেপে যারা পুরস্কার বিজয়ী:
প্রথম: আল- আমিন, অতিথি
দ্বিতীয়: মো, হাবিবুর রহমান, অতিথি
তৃতীয়: রোভার স্কাউট নাজমুল হক
শীতের অলস সূর্য ক্রমে পশ্চিমে হেলে পরছে, তাই কলেজের অধ্যক্ষে প্রস্তাবে বিকেলের মিষ্টি রোদে সাংস্কৃতিক পর্ব আয়োজিত হয় কলেজ মাঠে। এই আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কয়েকজন কবি, অতিথি ও রোভার স্কাউট সদস্যরা। দুইজন ক্ষুদে বন্ধুও চমৎকার সঙ্গীত পরিবেশন করে।
সবশেষে কাব্যলোকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আমি সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কলেজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি এমন একটা সুন্দর আয়োজনে আমাদের সুযোগ দেয়ার জন্য। কলেজের প্রত্যেকেই এ আয়োজনে সর্বতো সহায়তা দিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ এমন আয়োজন করতে পেরে আনন্দিত, শিক্ষকমণ্ডলিও খুশী। তারা আবারো এমন আয়োজনে শরীক হতে আগ্রহী বলে জানান।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সূর্যি পশ্চিম দিগতে অস্তমিত হয়েছে, কাব্যলোকের ২৭তম আয়োজনের মেলা সাঙ্গ হলো; কলেজের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ো কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমরা ফিরে চললাম ঢাকার উদ্দেশে।
রাত নয়টা নয়টার ক্ষানিকটা আগে কাব্যলোকের বাস দুটো শাহবাগে পৌঁছে দিলো আমাদের। সকলে সুন্দর একটা দিন অতিবাহিত করে, স্মৃতির ভান্ডারে কাব্যলোক-২৭ ধারণ করে নিজ নিজ কুটিরে ফিরে গেলেন। আবার দেখা হবে কাব্যলোকের ২৮তম আয়োজনে অন্য কোন পল্লী প্রান্তরে… সুপ্ত বাসনা মনে রইলো সকলের।
অনুষ্ঠানের আরো ছবি দেখার জন্য ভিজিট করুন:
https://www.facebook.com/groups/kabbolokgroup