কবিতা

শহীদ মিনার

সোহেল রানা

তাজা রক্তে বক্ষ ভেজা..
যেন শত-সহস্র প্রাণের রক্তের রক্তে লাল টকটকা!
গোধূলির নির্মল রূপে সেই বক্ষটা
যেন সূর্যের মতো লাল টকটকা।

আকাশ গহীন অন্ধকারের অতলে
নক্ষত্র শোকে বিবর্ণ আলোকে;
সেই আলোকে মোমবাতির ঝড়োকান্না-
এলোমেলো এবড়ো-থুবড়ো শিখায় জ্বলছে,
শত-সহস্র জনতা হয়েছে জড়ো ধরণী ব্যাপ্ত,
যতো রকমের বাগানের ফুল হাতে নিয়ে
অপেক্ষার প্রহরে;
বক্ষপিঞ্জর যেন চন্দন কাঠের চিতায় দাউদাউ জ্বলছে!
সেই আগুন ঢেলে দিবে-
কখন রাত্রির মধ্যপ্রহর অতিক্রম করবে,
সেই আগুন ঢেলে দিবে!

শান্ত সাগরের বক্ষে..রক্তের স্রোতে অশ্রুসিক্ত চোখে মা!-
পাহাড়ের বক্ষে..শূন্যতায় খাঁ-খাঁ হৃদয়ে দাঁড়িয়ে বাবা!-

(সাগরের বক্ষ থেকে আর পাহাড়ের হৃদয় ঝাঁঝরা করে
কেঁড়ে নিয়েছে যে দানবে!)

ভোর;
ভোরের আকাশে রক্তের গন্ধ!
ধূসর ডানার চিল এলোমেলো আকাশে মাতালের মতো!
বাতাসে করুন স্পন্ধন ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত!
মা হারিয়েছে বক্ষের ধন,
প্রেয়সী ভালোবাসার জন,
ভ্রাতৃ হারিয়েছে ভ্রাতা,
ভ্রাতা সহদর,
স্বজন হারিয়েছে আপনজন
‘ভাষার জন্য যারা দিয়েছে জীবন।’

প্রেয়সী শীতে ভেজা কানাকোয়ার চোখে,
যেমন শীতের রাতে বেতঝোপের শীষে-
ডুবায় আটকা পরা কানাকোয়া
রাতভর ছোটাছুটি করতে-করতে-করতে
সকালে নির্জিব;- শক্তিহীন
জীবন আছে,- তবু প্রাণ নেই!
শুধু রক্ত চক্ষু ‘স্থির’ চিত্তে দাঁড়িয়ে;
পলক পড়ছেনা সেই চোখে।
ভ্রাতৃ দাঁড়িয়ে আছে এবড়ো-থুবড়ো চুলে,
তার চোখের লেলিহান অগ্নিশিখায়-
ধূলা বাষ্পের ন্যায় উড়ছে-

ভাইয়ের বুকে লেগেছে বুলেট
ঢেলেছে তাজা রক্ত
কেঁড়ে নিয়েছে প্রাণ;
ভাইয়ের বুকে বিদ্ধ বুলেটে
সহদরের হৃদয় হয়েছে ক্ষান ক্ষান..!
তাই…
কপালে কাফনের কাপড় বেঁধে, রক্তের লালে..
বুকে শোকের চিহৃ
ব্যথিত হৃদয়ে মলিন মুখে-
ভিতরটা দুমড়ে-মুচড়ে কাঁদছে!
তবু চোখে প্রতিশোধের নেশাতে..
ওরা এসেছে.. দানব পাষান্ডেদের ছিঁড়েফেঁড়ে খাবার নেশাতে…
ওরা এসেছে শহীদ মিনারে..ভাইকে শ্রদ্ধা জানাতে..

আরও দেখুন

এ বিষয়ের আরও সংবাদ

Close